বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮
খোরশেদ আলম শিকদার: ছাদেই ফুল-ফল, শাক-সবজি ও মসলার বাগান করে পরিবারের খাদ্য পুষ্টি ও অর্থ চাহিদা পূরণ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ ও সুশীতল ছায়া, বাড়তি আয়, কর্মসংস্থান এবং অবসর সময় কাটান।
একদিন আমার বাবা-মা ও ভাই ঢাকা আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। অনেক কিছুর সাথে আমার ছোট ভাই তিনটি মাটির টব সঙ্গে কিছু রজনীগন্ধার চারা এবং মাটি এনেছিল। টবের মধ্যে মাটি দিয়ে চারাগুলো রোপন করে ছাদে রাখি। এ থেকেই আমার ছাদে বাগানের সুত্রপাত। একদিন আমার স্বামী বাজার থেকে লাউ এর চারা কিনে এনেছে। সেই চারা ভবনের পাশে মাটি গর্ত করে গোবর সার ও ছাই দিয়ে লাগিয়েছি। লাউয়ের চারা যখন বড় হতে লাগল, তখন রশি দিয়ে বেঁধে ছাদের উপরে আনা হল। বাঁশ কিনে স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে মাছা করলাম। ৩২টি লাউ গাছে ধরেছিল।
ক্রমশ বাগানের পরিসর বাড়তে থাকে। ৬ষ্টতলা ছাদে পরিকল্পিতভাবে অনেকগুলো চৌবাচ্চা তৈরী করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ছাদে বাগানের ট্রেনিং এবং পরামর্শ নেই। গাছ লাগানোর জন্য মাটি সংগ্রহ করি। মাটিগুলোকে ভেঙ্গে ঝুরঝুরে করি। এরপর জৈবসার, ইউরিয়া, একমুঠো পটাশ সার মিশিয়ে মাটিটাকে ভালভাবে তৈরী করে টবে ভরট করি। সরকারী বৃক্ষ মেলা, নার্সারী, ভেন গাড়ি থেকে ফুল, ফল, ঔষধি গাছের চারা ও শাক-সবজির বীজ ক্রয় করে এনে ছাদে চাষ করি। সকাল-বিকেলে ছাদে বাগানে পানি দেই,পরিচর্যা করি।
এভাবে গাছ লাগালে সতেজ ও সুন্দর থাকে। কোন গাছের কি ধরনের পোকা লাগছে তাতে ঔষধ দেই, আগাছা হলে সেটা উপড়ে ফেলা এসব কাজে ব্যস্ত থাকি। আমার স্বামী ও ছেলে-মেয়ে এবং ৫মতলার একজন ভাবী আমাকে সহযোগিতা করেন।
পাশের বাড়ির ভাবীরা প্রায় বলত ঐ বাড়ির বৌদি কি কৃষকের মেয়ে নাকি। ছাদে আসলেই দেখি মাটি খোঁড়াখুড়ি করে। অজয় দাদাকি কৃষি পরিবারে বিয়ে করেছে ? তাদের কথা শুনে মন একটু খারাপ লেগেছিল। কিন্তু উৎসাহ হারায়নি। বরং তাদেরকে উৎসাহ করতাম। আমি বীজ দিব, চারা দিব আপনারাও ছাদে গাছ লাগান। দেখবেন ছাদে এসে একটু সবুজ গাছের দিকে তাকালে আপনার মনে প্রশান্তি আসবে। আমার ছেলে-মেয়ে ছাদে গিয়ে গাছ থেকে ভেজালমুক্ত পেয়ারা ,আম,পেপেসহ নানান রকমের মৌসুমী ফল খেতে পারে। যারা আমাকে নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, আজ তারাও আমার পরামর্শে ও দেখায় আশপাশের বাড়ির ভাই ভাবীরাও এখন ছাদে ফুল,ফল,শাকসবজিসহ নানান গাছের বাগান গড়ে তোলেন।
ছাদে বাগান হল মানবসৃষ্ট সবুজ আচ্ছাদন যা টবে, ড্রামে, রোপনকৃত গাছ যে কোন আবাসিক বানিজ্যিক বা কলকারখানার ছাদে করা হয়ে থাকে। ছাদে বাগান কার্যক্রমের আওতায় নগরের পরিবেশগত বর্তমান সমস্যা অনেকাংশে দুর করা সম্ভব,পাশাপাশি বাড়তি খাদ্য পুষ্টি ও অর্থ আসে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে নগরীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য কৃত্রিম উদ্যান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এবং কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। পাকা বাড়ির খালি ছাদে অথবা ব্যালকনিতে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে বিভিন্ন উদ্যান ফসল বিশেষ করে ফুল, ফল শাকসবজির বাগান গড়ে তোলাকে ছাদ বাগান বলা হয়।
ছাদে বাগানের ফলে তাজা শাকসবজি ও ফল-ফুল পাওয়া যায়। সবুজ চত্বর ও বাগান বিনোদন দিতে পারে। পরিবেশ দূষনমুক্ত রাখে, জীববৈচিত্র সংরক্ষণে সহায়তা করে,অবকাঠামো তৈরীতে যে পরিমান চাষের জমি নষ্ট হয় ছাদে বাগানের মাধ্যমে তার কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যায়। গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পরিবেশ সুশীতল ও শান্তিময় থাকে। সর্বোপরি বাড়ির শিশুরা বিষমুক্ত ফল ও সাকশবিজি খেতে পারে।