শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৯
স্বাস্হ্য ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: ঘাড়ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা। সাধারণ কারণ থেকে অনেক জটিল কারণের জন্য ঘাড়ব্যথা হতে পারে।
ঘাড়ব্যথার প্রধান কারণগুলো কী?
আমাদের ঘাড়ে যে ব্যথা হয়, এটি হওয়ার একমাত্র কারণ, এখানে যে মেরুদণ্ড রয়েছে, সেই মেরুদণ্ডের কোনো সমস্যা। মেরুদণ্ডের চারপাশের যে গঠন, পেশি এর কোনো সমস্যার জন্য ঘাড়ব্যথা হয়। সাধারণত ছোটখাটো ঘাড়ের ব্যথা পেশির সমস্যার জন্য হয়। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে যদি কেউ একই রকম অঙ্গবিন্যাসে থাকে, তখন ব্যথা হতে পারে বা কোনো আঘাত যদি পেশিতে লাগে, এর জন্যও ব্যথা হতে পারে। এগুলো কিন্তু ছোটখাটো চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যদি মেরুদণ্ডের সমস্যা হয়, তাহলে অসুবিধা হতে পারে।
এখানে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? যে হাড় রয়েছে সেখানে সমস্যা হতে পারে বা যে স্নায়ুরজ্জু রয়েছে, এখান থেকে সমস্যা হতে পারে। এখান থেকে যে স্নায়ুটা বের হয়ে হাতের দিকে আসে, এর সমস্যার জন্য ব্যথা হতে পারে। ঘাড়ের সমস্যার কারণে হাতে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ঘাড়ের যে মেরুদণ্ড রয়েছে, সে হাড়গুলোর মধ্যে যে জোড়াটা রয়েছে, সেখানে ডিস্কগুলো ফেটে ভেতরের উপাদানগুলো বাইরে বের হয়ে আসতে পারে। দেখা যায়, এ কারণে ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে। এখানে আরেকটি বিষয় বলে রাখতে হবে, যদি এই প্যাথলজি বা সমস্যাটা মেরুদণ্ডের মাঝখানে হয়, তাহলে এটি স্নায়ুরজ্জু ও স্পাইনাল কর্ডকে চাপ দেয়। দেখা যায়, তার চার হাত-পা অবশ হয়ে আসে। হাত-পায়ের দুর্বলতা তৈরি হয়। একে আমরা বলি মাইলোপ্যাথি। এটি একটি সমস্যা।
আরেকটি হলো, যদি এই সমস্যাগুলো বা প্যাথলজিটা একটি পাশে হয়, মেরুদণ্ডের একটি পাশে, তাহলে দেখা যায়, ওই পাশে যে স্নায়ু রয়েছে, সেটি বরাবর ব্যথাটা হাতে আসে। তখন একে বলা হয় ব্রেকালজিয়া। যেমন, পায়ে বলি সায়াটিকা, এখানে বলি ব্রেকালজিয়া। এই যে মাইলোপ্যাথি ও ব্রেকালজিয়া দুটোর সমন্বয়ও হতে পারে।
এই যে বিষয়গুলো হচ্ছে, এর একটি হলো ডিস্কের সমস্যা। এটি সবচেয়ে প্রচলিত একটি সমস্যা। অন্যদিকে আবার ঘাড়ে যদি আঘাত লাগে, যে স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড রয়েছে, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এর জন্য সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি সেখানে যদি সংক্রমণ হয়, টিবি হতে পারে। এর জন্য কিন্তু সেখানে ব্যথা হতে পারে। একই রকম সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অন্যদিকে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের জন্য সমস্যা হতে পারে। হাড় একটি থেকে আরেকটি সরে যাওয়ার জন্য হতে পারে।
আরেকটি সমস্যা এখানে হয়, একে আমরা বলি ওপিএল। ওখানে যে পর্দা থাকে, সেটি যদি হাড়ে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তখনো দেখা যায় এটি স্নায়ু ও শিকড়ের মধ্যে চাপ তৈরি করে ব্যথা করে।
ঘাড়ে ব্যথা হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
দেখা যায়, আপনি হয়তো রাতের বেলা শুয়ে রয়েছেন, একটু ব্যথা হলো অথবা দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করছেন ঘাড়ে একটু ব্যথা হলো, দেখা যায় একটু বিশ্রাম নিলেন, এরপর ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এগুলো খুব ছোট- খাট বিষয়। একটু ব্যথানাশক ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাচ্ছেন। এটি নিয়ে আপনার চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
যদি দেখা যায়, ঘাড়ে তীব্র ব্যথা হচ্ছে, এটি সহজে যাচ্ছে না বা গেলে এক বা দুই দিন পর ফিরে আসছে, বারবার আসছে, ঘাড়ে ব্যথার সঙ্গে হাতের দিকেও ব্যথা চলে যাচ্ছে, তখন অবশ্যই আপনার একে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। একই সঙ্গে যদি দেখা যায় আপনার হাত দুর্বল হয়ে আসছে, হাতের শক্তি কমে গেছে, হাতের মাংসপেশিগুলো শুকিয়ে আসছে, হাঁটতে যদি সমস্যা হয়, অনেক সময় বলি রোবোটিকভাবে হাঁটছেন আপনি, এমন হলে এগুলো কিন্তু খুব জটিল সমস্যা। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই তার চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
ঘাড়ে আবার ক্যানসার হতে পারে বা টিউমার হতে পারে। যদি দেখা যায়, ম্যালিগেন্ট টিউমার হয়ে গেছে, তাহলে এটি আরো জটিল সমস্যা। সেই জন্য এই ধরনের জটিল সমস্যা হলে, অবশ্যই এড়িয়ে না গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘাড়ব্যথা কেন হচ্ছে, কী পরীক্ষা করে বুঝবেন?
যখন রোগী আমাদের কাছে আসে, আমরা রোগীর ইতিহাস নিই। তার শারীরিক পরীক্ষা করি। আমরা নির্ণয় করার চেষ্টা করি, তার সমস্যাটা কোথায়। ঘাড়ের কোথায় সমস্যা হয়েছে? অনেক সময় দেখা যায় এক পাশে ব্যথা হয়েছে, আবার অনেক সময় দেখা যায় দুই পাশেই ব্যথা হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, তার হাতের থেকে পায়ের সমস্যাটা বেশি। হাতেরটা এড়িয়ে যাচ্ছে বা বলছে না। তবে আমরা যখন পরীক্ষা- নিরীক্ষা করি, দেখা যায় হাতেও তার সমস্যা রয়েছে। আমরা বুঝতে পারি তার ঘাড়ে সমস্যা। তখন আমরা অবশ্যই সেই সম্পর্কিত পরীক্ষা- নিরীক্ষা করি। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিতভাবে আমরা একটি এক্স-রে দেই। এটি করলেই আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারি। এরপর কিছু রক্তের পরীক্ষাও দেওয়া হয়। তবে সবচেয়ে জরুরি যে পরীক্ষাটা আমাদের লাগে, সেটি হলো, এমআরআই পরীক্ষা। এর মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বের করতে পারি। যদি মেরুদণ্ডের ডিস্ক প্রোলাপস হয়ে থাকে, এর এমআরআই খুব সুন্দর বোঝা যায়। যদি তার স্নায়ুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ডে চাপ থাকে, তাহলে আমরা বুঝতে পারি। পাশাপাশি যে স্নায়ুটা বের হয়ে হাতের দিকে যায়, সেটাতেও যদি চাপ খেয়ে থাকে, এটাতেও আমরা বুঝতে পারি।
অনেক সময় আমরা এমসিএস বা ইএমজি জাতীয় পরীক্ষা দেই। কারণ আপনি জানেন, ঘাড়ের এই সমস্যাগুলো সঙ্গে কিছু মেডিকেল সম্পর্কিত সমস্যাও রয়েছে। যেমন ধরুন, ট্রান্সভার্ট মায়ালাইটিস হতে পারে। একটি ভাইরাল ইনফেকশন হওয়ার পর দেখা গেল তার হাত পায়ে চলে গেছে। এটাতে কোনো সার্জারির প্রয়োজন নেই। আবার অনেক সময় গুলেনবেরি সিনড্রম বা এ ধরনের কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মটো নিউরন ডিজিজ নামে কিছু অসুখ রয়েছে, এগুলোতে সার্জারির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু কঠিন একটি অসুখ মানুষের হয়, যেখানে চার হাত-পা দুর্বল হয়ে যায়। প্যারালাইসিস হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে আমাদের চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা লাগে। এই ক্ষেত্রে ইএমজি বা এসইএস করলে আমরা অনেক কিছু নির্ণয় করতে পারি। অনেক সময় দেখা যায় সিটিস্ক্যান পর্যন্ত লাগে। যেমন ওপিএল এল হওয়া, ওখানে যে পর্দা রয়েছে, সেটি যদি ক্যালসিফাইড হয়ে যায়, হাড়ে রূপান্তর হয়ে যায়, এ ক্ষেত্রে এমআরআইতে বোঝা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমাদের সিটিস্ক্যান করে বুঝতে হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়, এই সমস্যাগুলোকে নির্ণয় করার জন্য। এই সমস্যাটা পুরোপুরি বুঝেই আমরা চিকিৎসা পরিকল্পনা নিতে পারি।