আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ||
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি দেশে ফিরতে চাই : সালাহউদ্দিন
মঙ্গলবার, ০২ জুন, ২০২০
আহসান হাবিব, নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০১৫ সালের ১১ মে থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে আছেন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ। আর তার আগের দুই মাস দেশের ভেতরেই ছিলেন নিখোঁজ।
সব মিলিয়ে ৫ বছর ২ মাস ২১ দিন ধরে একা স্বাভাবিক জীবনের বাইরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। দেশে ফেরার আকুতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সেখানকার নিম্ন আদালতের আদেশ মোতাবেক দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হলেও ভারত সরকারের আপিলের কারণে আসতে পারছেন না তিনি।
সালাহউদ্দিন বলেন, চেষ্টা করছি দেশে ফেরত যাওয়ার কিন্তু কোনোভাবেই হয়ে উঠছে না। কবে আদালত খুলবে, তাও অনিশ্চিত। শরীর ভালো নেই, আছে শারীরিক আরও জটিলতা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে ভাড়া করা একটি কটেজেই একাকী জীবন কাটছে তার।
দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ গভীর রাতে রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি নম্বর সড়কে ৪৯/বি নম্বর বাড়ির ২/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে র্যাব ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দুই মাস পর পাশের দেশ ভারতে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাকে। উদ্ধারের পর তার বিরুদ্ধে দেশটিতে অনুপ্রবেশের দায়ে মামলা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর মামলার কার্যক্রম চলার পর ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়। ওই বছরের ২৬ অক্টোবর আদালতের রায়ে অনুপ্রবেশের দায়ে করা মামলায় নির্দোষ হিসেবে রায় পান সালাহ উদ্দিন আহমেদ। পরে আবার ভারত সরকারপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, খুব স্বল্প কিছু কাজের মধ্য দিয়েই সময় কাটছে তার। কাজের মধ্যে ইবাদত, বইপড়া, একটু হাঁটাহাঁটি, মাঝে-মাঝে পরিবারের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথাবার্তা–এইসব সুনির্দিষ্ট।
সিএনএন বিডি ২৪.কম’র সঙ্গে কথা হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদের। শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল অবস্থায় আছি। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অনেক কমপ্লিকেশন তো আছেই। এখানে আসার পর দুটো মেজর অপারেশনও হয়েছে। সব মিলিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি।
চিকিৎসা কীভাবে হচ্ছে জানতে চাইলে সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, এখন তো সবকিছুই বন্ধ। আগে তো আদালতের অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতাম, শিলংয়েও চিকিৎসা নিতাম। কিন্তু এখন তো সব লকডাউনে বন্ধ অনেকদিন।
শিলংয়ে চিকিৎসা ও জীবনযাপনের আর্থিক পুরো বিষয়টি পারিবারিকভাবে করা হচ্ছে বলে জানান সালাহ উদ্দিন, বলেন; এগুলো তো সবই নিজস্ব।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি তো প্রায় চার বছর ধরে আইনিভাবে লড়ছি। কোর্টের নির্দেশে তো জামিন পেয়েছি। আদেশ অনুযায়ী আমাকে ফেরত পাঠানোর কথা কিন্তু সেটা না করে আপিল করেছে ভারতের সরকার পক্ষ। আপিল করার পরও প্রায় দেড় বছর চলে গেছে। এখনও আপিল শুনানি ঠিকমতো শুরু হয় নাই। এরমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে আদালতের কার্যক্রম লকডাউনে বন্ধ। কবে হবে, আর কিছু বলা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারের কোনও আগ্রহ না থাকলে কোনও আপিল হয় না।
২০১৫ সালের মার্চে যখন সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হন, ওই সময়ে বিএনপি পুরোদমে আন্দোলনে; অনেকটাই গেরিলা-উপায়ে দলের মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছিলেন তখন সালাহউদ্দিন। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে অজানা জায়গা থেকে প্রতিদিন দলের কর্মসূচি ও নেতাকর্মীদের কাছে শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে পাঠানোর কাজটি করতেন নিয়মিত। ২০১৩ সালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য, তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ঢাকার গ্রহণযোগ্য নেতারা যখন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে, তখন সালাহ উদ্দিন আহমেদ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। দলের চরম সংকটকালে নির্দেশনা মেনে চললেও ধরা পড়ে দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর এখন ভারতে মুক্ত অবস্থাতেও এক রকম অন্তরীণ আছেন তিনি। অথচ তাকে দেশে ফেরাতে বিএনপি দলীয়ভাবে দৃশ্যমান বা গোপন কোনও উদ্যোগই নেই, বলে দাবি করেন দলটির বিভিন্ন স্তরের কয়েকজন নেতা।
বিএনপির ফরেইন রিলেশন্স (আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক) কমিটির একজন সদস্য বলেন, ২০১৫ সালে ঢাকা সফরররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকেও সালাহ উদ্দিনের প্রসঙ্গটি তুলেছেন বিএনপির প্রধান। বিষয়টিকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার অনুরোধও ছিল ম্যাডামের পক্ষ থেকে। কিন্তু কোনও অগ্রগতি হয়নি।
দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে সব সময়ই গুরুত্ব পেয়েছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। ২০০১ সালে তিনি কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিনি যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হন। ভারতে আটক হওয়ার সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। পরে ওই দেশে থাকা অবস্থাতেই ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলের পর তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত করেন খালেদা জিয়া।