পাবনা বেড়ায় ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ: ৪০ হাজার টাকায় মিমাংসার চেষ্টা!
শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০
ফাইল ছবি
মোবারক বিশ্বাস,পাবনা: পাবনার বেড়া উপজেলায় এক ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার বিকালে ধর্ষিতা সেতু ডিজিটাল ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের মালিক ফয়সাল মোঃ আনিছের নামে ধর্ষন মামলা করেছে।
এজাহার সুত্র, ধর্ষিতার বক্তব্য ও পুলিশ সুত্রে জানা যায়, ধষিীতা ওই ক্লিনিকে রিসিপশনিষ্ট হিসেবে কর্মরত ছিল। ক্লিনিকের মালিক ফয়সাল প্রায় মাসখানেক পুর্বে ধর্ষিতাকে বলে তার বাড়ির লোকজন সবাই বেড়াতে গেছে, বাড়িতে কেউ নেই, তাই তাকে রান্না করে দিতে হবে। এই বলে ফয়সাল রান্নার জন্য মেয়েটিকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। পরে ক্লিনিকের মালিক ওই মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে এসে জোর পুর্বক একাধিকবার ধর্ষন করে। পরে ধর্ষনের ঘটনাকে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে, ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্লিনিকে আরো একাধিকবার ধর্ষন করে। মেয়েটি ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করা হয়। ঘটনা কাউকে জানানো হলে তাকে প্রানে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। পরে বিষয়টি যে কোনভাবে জানাজানি হয়ে গেলে গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি ওই মেয়েকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। বেশি বাড়াবাড়ি করা হলে চরিত্রহীন কলংক দিয়ে মেয়েটিকে বিচারের সম্মুখিন করা হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়। বিচারের ঘটনাটি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের কানে পৌছালে বিচারকেরা মেয়েটিকে নিয়ে দ্রæত থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে মেয়েটি থানায় ধর্ষনের মামলা দায়ের করেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান ধর্ষনের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালীরা ক্লিনিক মালিক ফয়সালের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা গ্রহন করে। ৪০ হাজার টাকা মেয়েকে দিয়ে বাকি টাকা বিচারকেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। তারা এও জানান, বিচারকেরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশকে ম্যানেজ করে ধর্ষনের ঘটনা ১মাস আগে দেখানো হয়েছে। যাতে করে ধর্ষীতা ধর্ষনের প্রমান করতে ব্যার্থ হয়। স্থানীয় বিভিন্ন ব্যাক্তি ধর্ষনের ঘটনা তদন্তের জন্য পিবিআই বা ডিবিতে হস্তান্তর করার দাবি জানান। অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ আবুল কাশেম জানান, ধর্ষনের একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে আমি থানার বাইরে থাকায় বিস্তারিত জানতে পারিনি। রাতে থানায় পৌছে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা অর্ন্তভুক্ত করা হবে। বেড়া থানার ডিউটি অফিসার এএসআই কামাল হোসাইন জানান, বেড়া শানিলা গ্রামের একটি মেয়ে এসে ধর্ষনের অভিযোগ দিয়ে গেছে। ওসি স্যার এলে অভিযোগটি উপস্থাপন করা হবে।
আরো জানা যায়, পাবনার বেড়াসহ জেলায় প্রায় দেড় শতাধিক ক্লিনিক রয়েছে। এরমধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ অনুমতি নিয়ে পরিচালনা করছে। বেশিরভাগ ক্লিনিকে দেহ ব্যবসাসহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। এসব অনুমোদনহীন ক্লিনিকে নিয়মবহির্ভুতভাবে অপরাশেনসহ নানা ভুল চিকিৎসার কারনে হর হামেশায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে সিজারের রোগীর মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে। বেশিরভাগ ঘটনায় টাকা ও ক্ষমতার মাধ্যমে আপোষ করা হয়। ফলে বাধাহীনভাবে এসব ক্লিনিক অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শুধুমাত্র বেড়া উপজেলায় গড়ে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৪জন রোগী ভুল চিকিৎসায় মারা যায়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় এসব ক্লিনিকে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত হয়ে থাকে। প্রশাসনের লোকজন বিশেষ কারনে এগুলো দেখেও না দেখার ভান করে। কয়েকজন ক্লিনিক মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, পাবনার সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি মাসিক মাসোহার নিয়ে থাকেন। তাই লাইসেন্স বা অনুমোদন না নিয়ে তারা অবাধে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে একদিকে রোগীরা যেমন অপ চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে, সেই সাথে সরকার প্রতিবছর রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনিয়মের বিষয়ে নজর দিতে প্রকৃত ক্লিনিক মালিকগণ যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।