সেই সাথে আটঘরিয়ায় আওয়ামীলীগে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। নেতা-কর্মীরা বাপ-বেটার মতের বাইরে গেলেই হামলা-মামলার শিকার হচ্ছে। যার প্রকট আকার ধারন করে গত উপজেলার নির্বাচনের পর থেকে। সর্বশেষ গত চাঁদভা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বাপ-বেটার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় ৫জন আহতসহ বেশ কিছু গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তার ছেলে তানভীর ইসলামকে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বানিয়ে প্রভাব বিস্তার করে দলীয় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোবারক হোসেন পান্নাকে পরাজিত করে। এ ঘটনায় দল তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় তার পর থেকে সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন ও তার ছেলে তানভির ইসলাম আটঘরিয়ায় সন্ত্রাসের রাম রাজত্ব চালাতে থাকে। এতে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীসহ স্থানীয় জনগণের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। স্থাণীয় আওয়ামীলীগ ও সাধারণ জনগণ তাদের ভয়ে আতংকে দিন যাপন করতে থাকে। বাপ-বেটার সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন সাবেক সভাপতি ছাত্রলীগ ও যুবলীগ আটঘরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি মোঃ আশরাফুল আলম, দপ্তর সম্পাদক পৌর আওয়ামী লীগ মোঃ শহীদুল ইসলাম, আটঘরিয়া সরকারি মহাবিদ্যালয় সাবেক ছাত্র সংসদের ভি পি ও সাবেক সহ-সভাপতি উপজেলা ছাত্রলীগ শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আটঘরিয়া পৌর আওয়ামী লীগ মোঃ বেলাল হোসেন (ভি পি বিল্লাল), সাংগঠনিক সম্পাদক চাঁদভা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ মোঃ মনিরুজ্জামান বাবু, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ মোঃ নুরুল ইসলাম নুরু, দেবোত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শ্রী নিখিল কুমার শাহ্, সভাপতি চাঁদভা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগ মোঃ আব্দুল মান্নান, সাবেক সভাপতি আটঘরিয়া সদর চাঁদভা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আটঘরিয়া পৌর আওয়ামী লীগ মোঃ আশরাফউজ্জামান জুয়েল, ৭ নং ওয়ার্ড ল²ীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ মোকাদ্দেস, ২ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ও সাংগঠনিক সম্পাদক আটঘরিয়া পৌর যুবলীগ মোঃ শাহ আলমসহ অগনিত নেতা-কর্মীর উপর হামলা চালিয়ে পুঙ্গ ও নিঃস্ব করে দিলেও জেলা আওয়ামীলীগ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। বাপ-বেটার সন্ত্রাসের তান্ডব থেকে বাদ যায়নি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোবারক হোসেন পান্না, চাঁদভা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম কামাল সহ আরো কয়েকজন নেতা-কর্র্মী। জেলার নেতৃবৃন্দের সামনে গত ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া আসনের উপনির্বাচনের বর্ধিত সভা শেষে তাদেরকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার চাঁদভা ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সম্মেলনে বাপ-বেটার পছন্দের প্রার্থী ২০১৪সালে বিএনপি থেকে আগত টুটুলকে সভাপতি ঘোষনা না দেওয়ায় সন্ত্রাসী হামলার কারন বলে জানা গেছে। কে এই টুটুল ? গত ২০১১ সালে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আমিনুল হক সর্মথিত চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে জামায়ত প্রার্থীর কাছে পরাজয় বরণ করেন। ২০১৪সালে উপজেলা আওয়ীমীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতনের হাত ধরে আওয়ামীলীগে রাজনীতিতে যোগদান করেন। ২০১৬সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম কামালে বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে টুটুল নির্বাচনে অংশগ্রহন করে পরাজিত হন। টুটুলের বিরুদ্ধে হোন্ডা সন্ত্রাসীসহ একাধিক মামলা আটঘরিয়া থানায় রয়েছে। আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ টুটুল আওয়ামীলীগে যোগদান করলেও বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে। আর এ কারনেই স্থানীয় আওয়ামীলীগকে প্রতিহত করতে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী হামলার মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
শনিবার জেলার নেতৃবৃন্দ সম্মেলন ঘোষনা না করেই নেতা-কর্মীরা চলে যাবার সময় প্রতিপক্ষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে উপজেলার চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম ও টুটুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী। হামলায় আহত হন হাপুনিয়া গ্রামের ইসমাইল শেখের ছেলে জালাল শেখ (৭৫), রব্বেল শেখের ছেলে আমু (৭০), খোয়াজউদ্দিন শেখের ছেলে ওয়াজউদ্দিন (৬০) বয়রার আব্দুস সামাদের ছেলে শান্তসহ আরো কয়েকজন। স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান কামাল জানান, সম্মেলন সমাপ্ত ঘোষনা করার পর পরই তানভীর ও টুটুলের নেতৃত্বে শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে হামলা করে সাধারন নেতা-কর্মীদের আহত করে। আহতদের মধ্যে ২জন পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় কয়েকটি প্রাইভেটকার সহ ইঞ্জিন চালিত নসিমন করিমন ভাংচুর করে সন্ত্রাসীরা। এদিকে ঘটনার বিষয়ে জানতে আওয়ামীলীগ নেতা ও ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া আসনের সাবেক সাংসদ পাঞ্জাব বিশ্বাস জানান, সম্মেলন শেষে যখন নেতা-কর্মীরা বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়ে হামলা করা হয়। হামলায় আমি আহত না হলেও আমার ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি ভাংচুর করা হয়। তিনি আরো জানান, তানভীর ও টুটুলের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী পাবনা থেকে আগত কয়েকজন নেতাকেও লাঞ্চিত করে। হামলা ও লাঞ্চিতের বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক এ্যাড আহাদ বাবু বলেন, সেখানে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। পাঞ্জাব বিশ্বাসের রেফারেন্স দেওয়া হলে, তিনি বলেন পাঞ্জাব বিশ্বাস ২০১৮ সালে নিজের বাড়িতে নিজে বোমা ফাটিয়ে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে ছিল। তিনি এবারও তার নিজের গাড়িটি ভেঙ্গে অন্যের উপর দোষ চাপাতে চাইছে। সম্মেলনে উপস্থিত জেলা আওয়ামীলীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক মনিরউদ্দিন আহম্মেদ মান্না বলেন, সম্মেলন শেষে আমরা চলে আসার পর শুনেছি সেখানে পাঞ্জাব বিশ্বাসের গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে। তবে কারা ভেঙ্গেছে তা আমি বলতে পারবো না। আহতদের বিষয়ে কিছু জানি না। তিনি এও জানান, আওয়ামীলীগ একটি বিশাল দল। এমন ঘটনা দলের জন্য কোন বিষয় না। তবে গত সংসদ উপনির্বাচনে আটঘরিয়ায় বর্ধিত সভায় আওয়ামীলীগ নেতা মোবারক ও কামালের উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি আরো জানান, সেই সময়ে হামলার ঘটনায় আটঘরিয়া যুবলীগের নেতৃবৃন্দ জড়িত ছিল। জেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ সেখানে উপস্থিত থাকায় বিষয়টি জেলা যুবলীগের দেখার কথা।
এদিকে আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গতবারের উপজেলা নৌকা প্রতিকের প্রার্থী মোবারক জানান, সেখানে তানভীর-টুটুলের নেতৃত্বে হামলা ও গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। গত সংসদ উপনির্বাচনে দলীয় বর্ধিত সভা শেষে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন ও তার ছেলে উপজেলার চেয়ারম্যান তানভীরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর হামলা করে গুরত্বর আহত করে। এ ঘটনায় সেই সময়ে জেলার নেতৃবৃন্দ বাপ-বেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও পরে অজ্ঞাত কারনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। সম্মেলনে হামলার বিষয়ে আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোঃ সিদ্দিকুল ইসলাম প্রথমে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা এড়িয়ে গেলেও পরে তিনি স্বীকার করেন। তিনি এও বলেন, পাঞ্জাব বিশ্বাসের গাড়ি ভাংচুরের কারনে তিনি যদি আইনগত সহায়তা চান এবং অভিযোগ দেন তবে আমরা অবশ্যয় দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।