মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০
তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: করোনা অতিমারীর দ্বিতীয় আঘাতে যখন বিশ্বের অনেক দেশই বিপর্যস্ত তখন এই ভাইরাসের নতুন রূপ বা ভ্যারিয়ান্টটি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরো বেড়েছে। কারণ নতুন করোনা ভাইরাস আরো বেশি ছোঁয়াচে ও দ্রুত ছড়াচ্ছে।
নতুন ভাইরাস নিয়ে কেন উদ্বেগ?
তিনটি কারণে করোনাভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়ান্টটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে:
১.এটি ভাইরাসের অন্য সংস্করণগুলোকে প্রতিস্থাপিত করছে;
২. এটির বিভাজন বা রূপান্তর ভাইরাসের কিছু অংশে পরিবর্তন আনে;
৩. এসব বিভাজনের মধ্যে বেশ কিছু ল্যাবে পরীক্ষার পর দেখা গেছে যে এগুলো মানুষের দেহের কোষকে সংক্রমিত করার ভাইরাসের যে সক্ষমতা তা বাড়ায়।
এসব বৈশিষ্ট্য ভাইরাসটিকে সহজে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা দেয়।
ভাইরাসটির সংক্রমণ কমিয়ে আনতে এরই মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এটা কত দ্রুত ছড়ায়?
সেপ্টেম্বরে প্রথম ভাইরাসের এই নতুন ধরণটি শনাক্ত করা হয়। নভেম্বরের দিকে লন্ডনে আক্রান্তদের মধ্যে চার ভাগের এক ভাগ ছিল নতুন বৈশিষ্ট্যের এই ভাইরাসের শিকার। আর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি দুই-তৃতীয়াংশে পৌঁছায়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস আগের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে ছড়ায়। যার জেরে দক্ষিণ ইংল্যান্ডে সম্প্রতি অতি দ্রুত গতিতে করোনা ছড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)-কে এই ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, তা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। লন্ডনের নতুন যাঁরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ৬০ শতাংশই নতুন ভাইরাসের কবলে পড়েছেন।
দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার (২০ ডিসেম্বর) এই ভাইরাসে এক হাজার ১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এই ভাইরাস প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা গিয়েছিল।
এই ভাইরাসকে আটকাতে জনসন ঘোষণা করেছেন, লন্ডন এবং দক্ষিণপূর্ব ইংল্যান্ডে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। গত শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) জনসন বলেছেন, যত দিন যাচ্ছে, ততই এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা বেশি করে জানছি। ভাইরাস যদি চরিত্র বদল করে আক্রমণ করে, তবে আমাদেরও আত্মরক্ষার চরিত্র বদল করতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই নতুন ধরনের ভাইরাসকে আটকানো কঠিন। কারণ, এই ভাইরাস অতি দ্রুত ছড়ায়। যুক্তরাজ্যে এখন করোনার প্রতিষেধক দেয়া চলছে। এখন আশি বছরের বেশি বয়সীদের এই প্রতিষেধক দেয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ভাইরাসের চরিত্র বদল করা নতুন নয়। করোনা ভাইরাসেরও বিভিন্ন প্রজাতি আছে। তবে এখনো পর্যন্ত সেই প্রজাতিগুলির মধ্যে আর বেশি ক্ষতিকারক কিছু দেখা যায়নি। কিন্তু নতুন করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি ছোঁয়াচে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে।