সাইফুল ইসলাম রয়েল,কলাপাড়া প্রতিনিধি: জন্মের পর থেকেই অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন অবিচ্ছেদ্য অংশ মাথা। বর্তমানে মাথার ওজন প্রায় দশ কেজি।
মাত্র তিন বছর বয়সে শরিরের দ্বিগুন ওজন নিয়ে সারাক্ষন শয্যাসায়ী হয়েই থাকতে হচ্ছে ঘরের একমাত্র আদুরে কন্যাকে। অসহায় জেলে পরিবারে জন্ম নেয়া এ শিশুকে বাচাঁতে ইতোমধ্যেই ভিটিমাটি বিক্রি করে তা ব্যয় করেছেন চিকিৎসায়। তবুও হাল ছাড়েননি বাবা মা। আর কোনো উপায়ান্ত না পেয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রিত থেকে এখন সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন পাড়া প্রতিবেশিসহ সাধারণ মানুষের কাছে।
আর পাঁচটা শিশুর মতই ফুট ফুটে অবায়ব নিয়ে জন্ম নিয়েছিল আরিফা। জন্মের কিছুদিন পর থেকেই হাইড্রোক্যাফালাস নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে আদুরে এই জেলে কন্যা। এখন বয়স মাত্র ৩ বছর। উপজেলার লতচাপলী ইউপির তাজেপাড়া গ্রামে একটি আশ্রিত বাড়িতেই এখন বসবাস তার। অধিক ওজনের মাথা নিয়ে এপাশ ওপাশ করতে না পারায় বাধ্য হয়েই যন্ত্রনাসিক্ত আরিফাকে সবসময়ই বিছান্য়া শুয়ে থাকতে হয়। কারো কথা শুনলেই হাত দিয়ে চোখের পাতা মেলে ধরে দেখার আপ্রান চেষ্টা তার। এমদ দৃশ্য দেখে পাষান হৃদয়ও কেদেঁ উঠবে। একমাত্র আদুরে কন্যার চিকিৎসা ব্যয়ে ভিটামাটি হারিয়েও সুস্থ্য করতে না পারায় এখন পাগল প্রায় আরিফার সহজ স্বরল পিতা জেলে মো. কাওছার। অর্থাভাবে চিকিৎসা সঙ্কটে মেয়ের পাশে বসে কেঁদে কেঁদে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পরেছেন মা ডালিয়া বেগম। তার ভাষ্যমতে মেয়েকে হয়তো আর বাঁচানো সম্ভব নয়। মাথার ওজন দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় চোখের আকার ছোট হয়ে গেছে। এছাড়া দুটি চোখেই এখন ক্ষত দেখা দিয়েছে। আরিফার বাবা জানান, আমার সবকিছু বিক্রি করে ওর চিকিৎসা করেছি। এখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। বর্তমানে দু-বেলা দু মুঠো খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। অপারেশন করানোর মতো কোনো অর্থ আমার কাছে নেই। একমাত্র ভরসা আল্লাহ। এদিকে আরিফার মায়ের আর্তনাদ এমন কেউ কি দুনিয়ায় নেই যে আমার মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে আসবে। ছোট্র মানুষ, আজ তিনটি বছর একই ভাবে বিছানায় শুয়ে আছে। এপাশ ওপাশ ঘুরে শুতেও পারে না। মেয়ের এমন কষ্ট আর সইতে পারছেন না বলে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। মুসুল্লিয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.ইউনুস হাসান জানান, অর্থাভাবে পরিবারে ঠিকমত দুবেলা খাবার জুটছে না। একমাত্র কন্যার চিকিৎসায় সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃস্ব পরিবারটি। তাই এই শিশুটির চিকিৎসার লক্ষে মানবিক কারনে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ’র আহবায়ক অধ্যক্ষ ফাতেমা আক্তার রেখা জানান, ওই শিশুটির অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমি ১০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তা করেছি। তবে সমাজের বিত্তবানরা একটু এগিয়ে এলে আরিফার সম্পূর্ন চিকিৎসা অর্থাৎ অপারেশন করানো সম্ভব। মানবিক কারনে আমাদের সবারই এগিয়ে আসা উচিৎ। উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মিজনুর রহমান জানান, আমরা ইতোমধ্যে ওই শিশুটির জন্য প্রতিবন্ধি ভাতা পাইয়ে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করেছি।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিনময় হালদার জানান, শিশুটি হাইড্রোক্যাফালাস রোগে আক্রান্ত। তবে অপারেশন করে তাকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব । আরিফাকে সহায়তা প্রদানের জন্য বিকাশ নাম্বার(০১৭১৪৪৮৪৩৫৬)