ইতোমধ্যে গুজব ও করোনা ভাইরাসে বেশকিছু লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। দুর্নীতিতে কারো প্রাণহানি না হলেও সরকারের যে মানহানি হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ সময়ের বাংলাদেশ এ সবকিছু মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত অতিক্রম করছে। যদিও পত্র-পত্রিকায় আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির খবর প্রকাশিত হচ্ছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সরকার যে দিশাহারা সেটা গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
১০ জুন প্রধানমন্ত্রী ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন। আর ১১ তারিখেই জানতে পারি হাত দিলেই ওঠে আসছে মডেল মসজিদের পলেস্তারা, ফেটে যাচ্ছে টাইলস। শুধু তাই না। এমন কি পিলার ও দেয়াল বাঁকা করে নির্মাণ করা হয়েছে। আর আমরা তো জানি বাংলাদেশের সরকারি মডেল প্রাইমারি স্কুলগুলোর ভবন নির্মাণে কী ভয়াবহ দুর্নীতি হয়। মাত্র কয়েকদিন আগেই জেনেছি মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে গৃহহীনদের দেওয়া ঘরও ধসে পড়েছিলো উদ্বোধনের আগেই। কয়েক বছর আগের সংবাদ নিশ্চই মনে আছে যে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননার সময় দেওয়া ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে। তাহলে বুঝুন দেশ কতোটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদ বানাবে সেখানেও দুর্নীতি।
যারা কাজটি করেছে খোঁজ নিয়ে দেখুন রুটিন করে নামাজ পড়তে ভুল হয় না কিন্তু দুর্নীতি করতে ছারে না। যেখানে মানুষ পুণ্যের জন্য দান করে সেখানে তারা দুর্নীতি করে অবকাঠামো বানিয়ে শত শত মানুষের জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তার মানে তারা লোক দেখানো নামাজই পরে পরকালে বিশ্বাস ফিশ্বাস আসলে করে না। মানুষ পুরস্কার দেওয়ার সময় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গুণেমানে ওটা যেন সেরা হয়। আর সেই পুরস্কার যদি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সেটার জন্য অতিরিক্ত নজরদারি আশা করা কি অন্যায়? আর পুরস্কারটি যদি হয় গরিবদের জন্য তাহলে এর নির্মাণে আরো মনোযোগ ও সততা আশা করা উচিত। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেশের মানুষ না। বিদেশিদের পুরস্কারের ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই যদি মিছে হয় তবে কেমন লাগে?
এতোসব অন্যায় দুর্নীতি কেন ঘটে যাচ্ছে? কারণ দেশের নীতিনির্ধারকরা ঠিক নেই। তারা দুর্নীতি করে। বড় বড় আমলারা যদি দুর্নীতি করে কানাডায় বেগম পাড়ায় বাড়ি কিনে, এমপি মন্ত্রীরা যদি দুর্নীতি করে বিদেশে অর্থ পাচার করে, ক্ষমতাবান হওয়ার কারণে যদি খুন করেও রাষ্ট্রের বিশেষ কৃপা পায় সেই দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে সততা কীভাবে আশা করবো? একটা সময় ছিলো যখন মানুষ নিজের সম্পদ ও অর্থকরী দান করে স্কুল, কলেজ ও মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছে। বিনিময়ে কিছু নেওয়ার আশা করেনি।
বড় বড় দুর্নীতিবাজ কারো কি আজ পর্যন্ত বিচার হয়েছে? দুর্নীতিবাজ যদি সরকারি দল ব্যতীত অন্য কোনো দলের হয় তাহলে বিচার মাঝে মধ্যে হয়। কিন্তু সরকারি দল করে এমন কেউ দুর্নীতি করলে কি বিচার হয়েছে? মাঝে মধ্যে লোক দেখানোর জন্য বিচার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারপর ডিপ ফ্রীজে। এইভাবেই দুর্নীতিকে আস্কারা দিতে দিতে দুর্নীতি এক ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখন মানুষ মসজিদ, মাদ্রাসা, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুল নির্মাণেও দুর্নীতি করে। আল্লাহর ঘর মসজিদ নির্মাণ নিয়েও চরম দুর্নীতি কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মডেল মসজিদ নির্মাণ নিয়ে দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণ আশা করেছিল যে, মসজিদগুলোতে যোগ্য ও পরহেজগার জনবল নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে সরকার ইসলাম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্যে একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে দেশবাসী লক্ষ্য করছে মসজিদ উদ্বোধনের আগেই পলেস্তার ফেটে যাচ্ছে, দেয়ালের রং উঠে যাচ্ছে, পিলার বাঁকা। মসজিদ নির্মাণ নিয়েও যে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক: আফছানা রহমান, বার্তা সম্পাদক সিএনএন বিডি.টিভি।