ধরা যাক চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর নেই এতে আ.লীগের কী লাভ?
রবিবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
মো: ওবায়েদ উল্যাহ ভূলন: বাংলাদেশে কয়েক দিন ধরে ‘কবর’ বিতর্ক সরগরম। চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর আছে কি নেই এটিই যেন দেশের প্রধান সমস্যা।
রাষ্ট্র, সমাজে যেন কোনো ইস্যু নেই। একমাত্র ইস্যু কবর। দেশে সব মানুষের করোনার টিকা কবে কী হবে তা নিয়ে যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেন জ্যোতিষী মন্ত্রী, প্রতিদিন টিকা দেওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেন। গণটিকার জন্য দেশের জনগণকে ডেকে এনে হয়রানি করেন। এ নিয়ে রাজনীতিতে কারও টুঁশব্দ নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর ও মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তুলে সরকার আসলে কী চায় সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই বছর আগেই বিএনপিকে মাঠে নামানোর জন্য জিয়ার কবর নিয়ে রাজনীতি সামনে আনা হতে পারে। কেউ কেউ একে বিএনপির জন্য ফাঁদ বলেও মনে করেন। বিএনপি এখনই আন্দোলন শুরু করলে আবারও মামলা-হামলা করে দুই বছর আগেই ঘরে ঢোকানোর কৌশল নেবে সরকার। কারণ, এমনটি করা গেলে সরকার নির্বিঘ্নে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারবে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় আসতে ব্যর্থ হয়। ওই সময় বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। পরে সরকারের এক বছর পূর্তিতে বিএনপিসহ এর নেতৃত্বাধীন জোট আবারও লাগাতার অবরোধের কর্মসূচি পালন করে। এসব ঘটনার সূত্র ধরে ২০২০ সাল পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার মোট এক লাখ ৫৯৩টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৯ জনকে। গত এক যুগে বিএনপির মোট এক হাজার ৫২৬ জন খুন ও ৪২৩ জন গুমের শিকার হয়েছেন বলে দলটি কেন্দ্রীয় তথ্য সংরক্ষণ সেল দাবি করেছে। তাদের হিসাবে গত এক যুগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে দলটির মোট ১১ হাজার ১২৬ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন।
সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর কথা তারা আগেও বলেছে।জিয়াউর রহমানের অবদানকে ছোট করতে চাইলেও সেটি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর তাঁর কবর সরানো হলে বিএনপি বসে থাকবে এটি ভাবারও কোনো কারণ নেই। সরকার অনেকভাবে বিএনপিকে উসকানোর চেষ্টা করছে।
জিয়াউর রহমানের কবরে লাশ নেই, মুক্তিযুদ্ধে জিয়া একটিও গুলি ছোড়েননি, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন—সরকারি দল আওয়ামী লীগের তৈরি করা এমন নানা ইস্যুতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে। রাজনীতিবিদদের বিতর্কের একমাত্র ইস্যুই হলো চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিতে আসলে কী আছে। এ বিতর্কে আওয়ামী লীগের একেকজন মন্ত্রী যেন গবেষক, প্রত্নতত্ত্ববিদ। জিয়ার কবর এবং লাশ দেখা না দেখা নিয়ে বিতর্কে বাংলাদেশের রাজনীতির যে কবর রচিত হচ্ছে তা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কবরে লাশ খোঁজার অরুচিকর বিষয় রাজনীতির জনবিচ্ছিন্নতারই এক প্রমাণ। আমাদের মতো মূর্খ আমজনতা তীব্র এবং উত্তপ্ত ‘কবর’ বিতর্কে খানিকটা বিভ্রমে পড়েছে বইকি। ধরা যাক, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর নেই। এতে রাষ্ট্রের বা আওয়ামী লীগের কী লাভ? আবার যদি ধরে নিই, চন্দ্রিমা উদ্যানেই জিয়ার কবর। তাতে রাষ্ট্রের বা আওয়ামী লীগের কী ক্ষতি?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জিয়াউর রহমানের কবর সরানো নিয়ে এ মুহুর্তে সরকারের সিদ্ধান্ত নেই।আশা করি এর ফলে আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহীদের কবর খোঁড়া বন্ধ হবে। কবর নিয়ে রাজনীতি না থামালে রাজনীতিরই কবর রচিত হবে। চাটুকার, বসন্তের কোকিলরা আশা করি এ কথাটি জানেন, ডালে বসে গাছ কাটলে নিজেকেই বিপদে পড়তে হয়।