আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিংমল হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে।
দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। দুবাই বিমানবন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শতশত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে পানিতে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না। পুরো ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলোর ব্রেক কাজ করছিল না। ফলে একটি গাড়ি গিয়ে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় পানির মধ্যে ডুবে ছিল।
ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো ঘটনার পর ঘণ্টা আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শতশত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আটকে পড়া যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে খাবার আনতে কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ, বিমানবন্দর অভিমুখে সবগুলো সবগুলো সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।
দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক বলেন, গত ৭৫ বছরের মধ্যে দুবাইতে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টা থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরেও বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও শহরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা আছে বলে তিনি জানান। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬০ মিলিমিটার।
দুবাইয়ের সাংবাদিক বলছেন, সেখানে তীব্র জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুল ব্যবস্থা। এখানে বৃষ্টির কালচার ছিল না। ড্রেনেজ সিস্টেমের কথা তারা চিন্তাই করেনি। শহর গড়ে উঠেছে ড্রেনেজ সিস্টেম ছাড়া।
শহরের কেন্দ্রস্থলে ড্রেনেজ সিস্টেম আছে, কিন্তু এর বাইরে ড্রেনেজ সিস্টেমের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। অল্প বৃষ্টিতেও অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় তীব্র জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
দুবাইয়ে ভালো ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য জন্য ২০২৩ সালে দেশটির সরকার প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
দেশটির সরকার বলছে, আগামী ১০০ বছরের কথা চিন্তা করে এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি খাত মিলে এই কাজ করবে।
দুবাইয়ের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তারা কখনো বুঝতেই পারেনি যে এ পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য তারা কোনো ড্রেনেজ সিস্টেম রাখেনি।
বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দরটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার এক নম্বর টার্মিনালে কিছু বিমান অবতরণ করা শুরু করেছে। কিন্তু দুবাই ছেড়ে যাওয়া ফ্লাইটগুলোর আরো বিলম্ব হবে।
দুবাই বিমানবন্দরের প্রধান পল গ্রিফিথস বলেন, এটা এখনো সাংঘাতিক একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয়। আমার মনে হয় না কেউ তার জীবনে কখনো এ ধরনের অবস্থা দেখেছে।
বিমানবন্দরের আশপাশের সড়কগুলো যানজটে স্থবির হয়ে আছে। কারণ, হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। বুধবার দুবাই বিমানবন্দরে ৩০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং আরো শতশত ফ্লাইট বিলম্ব হয়েছে।