তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কাজ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো, বৈষম্য থেকে মুক্তি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যমুক্ত নিজেদের স্বাধীন একটি দেশ। যে দেশের মালিক হবে জনসাধারণ। বৈষম্যহীন সমাজে আইনের শাসন থাকবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেছেন, যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের জন্য এক ধরণের সুযোগ-সুবিধা, বাকি সবার জন্য ভিন্ন। জনসাধারণের জন্য এক আইন আর যারা আওয়ামী লীগ করবে তাদের জন্য ভিন্ন আইন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হওয়ায় আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হবার পরে দেশে নতুন করে বৈষম্য শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টি নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে অন্যায় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জাতীয় পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে।অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্রদের মামলায় জাতীয় পার্টি নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এ অন্যায় আমরা মেনে নেব না।
দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি অনলাইন কর্মীদের সঙ্গে এবং ঢাকা বিভাগীয় জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাদা মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এ কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পাটি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, ২০২৪ সালে যখন চাকরিতে কোটাবিরোধী ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ শুরু হয়, তখন থেকেই জাতীয় পার্টি আন্দোলনরত ছাত্রদের পাশে ছিল। ১ জুলাই ছাত্ররা রাজপথে আন্দোলন শুরু করে, ৩ জুলাই দ্বাদশ সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় আমি বলেছিলাম, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গঠন প্রক্রিয়া ধংস করা হচ্ছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না। আমরা যেন ভুলে না যাই, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ‘এদেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হতে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।’ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে রংপুরে ১১টি মিথ্যা মামলায় জাতীয় পার্টির অন্তত ৩৩ জন নেতা-কর্মী আসামি হয়েছেন। তাদের অনেকেই গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন। রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির ২জন নেতা শহিদ হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীতেও জাতীয় পার্টি সক্রিয় অংশ নিয়েছে। জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতা-কর্মীরা ব্যানার নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করেছে। আন্দোলনে উত্তর খান থানা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়ার ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান অলিদ ও উত্তর খান থানা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হালিমের ছেলে মাশরাফি হোসেন ৫ আগস্ট সকালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, জাতীয় পার্টি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা শহিদ হয়েছেন, অনেকে জেল খেটেছেন। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয়ভাবে যৌথসভা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে। সারা দেশের নেতা-কর্মীদের ছাত্রদের পক্ষে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রহত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতাদের আসামি করা হচ্ছে। এ অন্যায় আমরা মেনে নিতে পারি না, আমরা এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করবোই।
এ সময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আরও বলেন, দেশের মানুষ অনেক কষ্টে আছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, বেড়েছে বেকারত্বের সমস্যা। দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চাই, যাতে তারা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন শুধু নয়, একটি পরিবর্তিত রাষ্ট্র কাঠামো ও সংশোধিত শাসনব্যবস্থা উপহার দিতে পারে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও খাওয়া-পরার ব্যবস্থা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
আজ শনিবার ২৬ অক্টোবর দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ৭ জেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাজীপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার মিয়া, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হেনা খান পন্নি, ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক খান মো. ইসরাফিল খোকন, গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মণ্ডল, গাজীপুর মহানগর আহ্বায়ক মোঃ শরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব শেখ মাসুদুল আলম টিটু, নরসিংদী জেলার সভাপতি ওমর ফারুক মিয়া, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. আবু হাসনাত মাসুম, নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সানাউল্ল্যাহ সানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন ভাওয়াল, মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. মোঃ হাসান সাঈদ, মুন্সিগঞ্জ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব মো. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্যাহ সেলিম।
জাতীয় পার্টি অনলাইন প্রতিনিধিদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য এ্যাড. মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, মনিরুল ইসলাম মিলন, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা এ্যাড. নুরুল ইসলাম তালুকদার, মো. খলিলুর রহমান খলিল, ইঞ্জিনিয়ার মইনুর রাব্বী চৌধুরী রুম্মন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুল হান্নান, এমএ রাজ্জাক খান, মাসুদুর রহমান মাসুম, জহিরুল ইসলাম মিন্টু, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম যাদু মিয়া, প্রিন্সিপাল মোস্তফা চৌধুরী, মাহমুদ আলম, সমরেশ মণ্ডল মানিক, কেন্দ্রীয় নেতা মো. সামছুল হুদা মিয়া, জাকির হোসেন, ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, মো. মাহমুদুল হক মনি, মো. সোলায়মান সামি, এ্যাড. এমএ ওয়াহাব, অর্ণব চৌধুরী, মেহেদী হাসান শিপন, আব্দুর রহিম, নাজমুল রেজা প্রমুখ।