সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে আধিপত্য কায়েম করতে চায় ভারত
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে কট্টর হিন্দুবাদীদের উস্কে দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চাচ্ছে উপমহাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে।
আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এ কথা বলেন।
ভারতের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে আপনারা ভারতকে যেমন বিভাজন করছেন, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গণতন্ত্রের যে একটি ঐতিহ্য ছিল এটাকেও ভূলুন্ঠিত করছেন আর সেই সাম্প্রদায়িকতার ধোঁয়া তুলে কট্টর হিন্দুবাদীদের উস্কে দিয়ে আপনারা চাচ্ছেন উপমহাদেশে আপনাদের আধিপত্য কায়েম করতে। আপনাদের এই বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব আপনাদের, হিংসাশ্রয়ী মনোভাবের কারণে, অপরকে ঘৃণা করার মনোভাবের কারণে আজকে নেপাল আপনাদের সাথে নেই, ভুটান আপনাদের সাথে নেই, শ্রীলংকা আপনাদের সাথে নেই, মালদ্বীপ আপনাদের সাথে নেই, পাকিস্তান তো নেই, বাংলাদেশও আপনাদের সাথে নেই। শুধুমাত্র আপনাদের অহংকার এবং একের পর এক শোষণের যে মনোভাব সেই কারণে। ’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'আমরা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি। এই জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানির
মধ্য দিয়ে। ১৮-১৯ কোটি মানুষের এই দেশকে আপনারা চোখ রাঙিয়ে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার দিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারবেন? হঠাৎ করে আপনাদের কি হলো যে আপনারা উঠেপড়ে লেগেছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে। ৫ আগস্টের আগে এ দেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল ঘৃণিত একটি সরকার। এরা ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজ দেশের সন্তানদেরকে হত্যা করতে দ্বিধা করতো না, এরা নিজ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষদেরকে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ করতে দ্বিধা করতো না। এরা ক্রসফায়ার দিয়ে নদীর ধারে, খালের ধারে মানুষদেরকে নির্দ্বিধায় হত্যা করতো। সেই হাসিনা সরকার আপনাদের এত প্রিয় ছিল কেন? কারণ আপনাদের সাহসে, আপনাদের উস্কানিতে শেখ হাসিনা যা ইচ্ছা তাই করে গেছে এই দেশে। উনার ভোটের দরকার হতো না, শেখ হাসিনার অধীনে যে ভোটগুলো হয়েছে সেই ভোটগুলো হয়েছে ভোটারবিহীন। যে ভোটের এক একটা নাম আছে ভোটার শূন্য ভোট, মিডনাইট ভোট আরও অনেক কিছু।’
ভারতের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, 'আপনারা মনে করছেন পেঁয়াজ বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষ তরকারিতে পেঁয়াজ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনারা রসুন, আদা, সয়াবিন তেল বন্ধ করে দিলে আমরা এগুলো আর রান্নায় ব্যবহার করতে পারবো না। আপনারা দুঃস্বপ্ন দেখছেন। আপনারা গরু রপ্তানি পাঁচ ছয় বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে তারা গরুর খামার, ছাগলের খামার গড়ে তুলে এক কোরবানি ঈদেই এক কোটি ২০ লাখ গবাদিপশু জবাই হয়।’
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের উদ্দেশে রিজভী আরও বলেন, 'আপনারা ভুলে যাবেন না বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত শ্রম প্রিয়, কষ্ট প্রিয়, পেঁয়াজ-রসুন-আদা তারা নিজেরাই উৎপাদন করতে জানে। আপনারা মনে করেন শুধু একটি দেশ আছে পৃথিবীতে, আর কি দেশ নেই? পৃথিবীতে যাদের কাছ থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারব, যাদের কাছ থেকে আমরা রসুন-তেল আমদানি করতে পারব, সেই দেশ কি নেই? আপনারা মনে করছেন এগুলো বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল হবে। অবস্থা কাহিল হয়েছে আপনাদের। আপনাদের নিউমার্কেটের কোনো দোকান চলে না, আপনাদের মার্কেটগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বাংলাদেশের মানুষ ওই কলকাতায় গিয়ে ডলার খরচ করে তারা সেখানে কেনাকাটা করে চিকিৎসা করতে যায় হাসপাতালে। হাসপাতাল আর চলবে না। আপনারা বন্ধ করে দিয়ে মনে করেছেন বাংলাদেশের মানুষ অস্থির হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষ আনন্দিত। প্রয়োজন হলে থাইল্যান্ড যাবে, মালয়েশিয়া যাবে, ইন্দোনেশিয়া যাবে কিংবা অন্য দেশে যাবে। আপনাদের মত হিংসাদ্রোহী যারা আমাদেরকে ঘৃণা করেন সেই দেশে মানুষ যেতে চায় না। রক্ত মূল্যে স্বাধীনতা কেনা এই জাতি। এই জাতিকে আপনি ভয় দেখিয়ে নতজানু করবেন, বাংলাদেশ সেই জাতি নয়।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সহ-সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জাহিদুল কবির, ছাত্রদল নেতা তৌহিদ আওয়াল, রাজু আহমেদ প্রমুখ।