সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিন
শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
শাহিনুর আক্তার, স্টাফ রিপোর্টার: দেশে সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তবে সংস্কারের গতি বাড়িয়ে জাতিকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিন।
আজ শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা টাউন হলে দলের কর্মী সম্মেলনে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন । এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে, বিজিবিকে সীমান্তের চৌকিদার বানিয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আমরা প্রতিশোধ নেবো না, তবে প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে বিচার করতে হবে। ’
ভারতকে উদ্দেশ্য করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশের এক ইঞ্চি কেন আধা ইঞ্চি জায়গাও ছেড়ে দেবো না। এ দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক বিভাজন নেই। স্বৈরাচার সরকার এবং মঈনুদ্দিন ও ফখরুল মিলে সাড়ে ১৭ বছর শ্বাসরুদ্ধকর সময় পার করেছে। এদেশের মানুষ আর সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে চায় না। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তান হবে না, ভালো একটা বাংলাদেশ হবে। নারীদের ঘরে বন্দী রাখার অধিকার আমাদের নেই। তাদের পেশাদারীর কাজ আছে, বাইরে যেতে হবে। ইসলাম নারীকে সম্মান দিয়েছে, তা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রক্ষা করবে। জনগণের উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
কুমিল্লা বিভাগের দাবি ও কুমিল্লা বিমানবন্দর প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লা বিভাগ কুমিল্লাবাসীর ন্যায্য দাবি। এ দাবি না মানাও জুলুম ছিল।’ কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি কুমিল্লা বিমানবন্দরও চালুর দাবি জানান।
জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘ভারত হামলা করলে দেশের জনগণ লাঠি, ইটপাটকেলসহ যার যা আছে তাই নিয়ে আপনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন। প্রয়োজনে সীমান্তে আমরা প্রাচীর তৈরি করবো যাতে ভারত ঢুকতে না পারে।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে উদ্দেশ্য করে ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী ভারতের প্রয়োজন, বাংলাদেশের প্রয়োজন নেই। কারণ ভারতে ধর্মীয় দাঙ্গা সংঘঠিত হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাবধানে কথা বলবেন, নচেৎ পশ্চিমবঙ্গের ২৫ শতাংশ মুসলমান আপনাকে প্রত্যাখান করবে।’
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম বলেন, ‘শেখ মুজিব ও তার কন্যা হাসিনা বাংলাদেশটাকে শেষ করে দিয়েছে। দেশটাকে ভারতের করদরাজ্যে পরিণত করেছিল।’
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবুল হাসানাত মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘জুলুম নির্যাতনের পরেও কুমিল্লার এই সম্মেলন প্রমাণ করে জামায়াতের খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে কিন্তু তার মতো আর কোনো ফ্যাসিস্ট যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ফ্যাসিস্টদল আওয়ামী লীগ ছাড়া আমরা সকল রাজনৈতিক দল এক ও অভিন্ন।’
এর আগে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত কর্মী সম্মেলন সকাল সাড়ে ৮টায় শুরু হয়। শুরুতে অর্থসহ পবিত্র কোরআন মজীদ থেকে তেলাওয়াত করেন ড. ক্বারী আবরার আহম্মদ। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ মাছুম মিয়ার বাবা মুহাম্মদ শাহীর মিয়া। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমীর ও সম্মেলনের সভাপতি কাজী দ্বীন মোহাম্মদ।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন জামায়াতের নায়েবে আমীর সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম ও মাওলানা আব্দুল হালিম। সম্মেলনের আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন ও মুহাম্মদ আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এডভেকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, মো. আব্দুস সাত্তার, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আমীর এডভোকেট মো. শাহাজাহান, উত্তর জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মতিন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মুহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল, এডভোকেট নাছির আহাম্মদ মোল্লা ও মেশাররফ হেসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবির কুমিল্লা মহানগর সভাপতি নোমান হোসেন নয়ন ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইলাহী।
যৌথভাবে সম্মেলন পরিচালনা করেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির একেএম এমদাদুল হক মামুন ও সেক্রেটারি মাওলানা মাহবুবুর রহমান।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, লক্ষীপুর জেলা আমির রুহুল আমিন, নোয়াখালী জেলা সাবেক আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুফতি আমিনুল ইসলাম, নাগাইশ দরবারের পীর মোস্তাক ফয়েজী, ইবনে তাইমিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান।