১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পরে
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন, ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, যার আওতায় ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখিয়ে হোয়াইট হাউস বুধবার (৪ জুন) এই ঘোষণা দেয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, যদি নির্দিষ্ট দেশগুলোর পরিস্থিতিতে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ হয়, তাহলে তালিকা পুনর্বিবেচনা করা হবে”। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে আরও দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হতে পারে যেহেতু সারা বিশ্বে নতুন হুমকি দেখা দিচ্ছে”।
নিচের ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে:
আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো (রিপাবলিক), ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন।
আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা জারি করা হয়েছে:
বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান, ভেনেজুয়েলা।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আগামী সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২:০১ মিনিট থেকে কার্যকর হবে।
হোয়াইট হাউস জানায়, এসব “কমন সেন্স” নিষেধাজ্ঞা আমেরিকানদের “বিপজ্জনক বিদেশি হুমকি” থেকে রক্ষা করার জন্য। ট্রাম্প তার নিজস্ব ট্রুথ সোশ্যালে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, কলোরাডোর বোল্ডারে ইসরায়েলপন্থী এক সমাবেশে সাম্প্রতিক হামলা এই নিষেধাজ্ঞার যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে।
উল্লেখ্য, ওই হামলায় এক ব্যক্তি দাহ্য বস্তু ও ফ্লেমথ্রোয়ার ব্যবহার করে ১২ জনকে আহত করেন। হামলাকারী হিসেবে এক মিশরীয় নাগরিকের নাম উঠে এসেছে।
ট্রাম্পের এই নতুন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ-বিদেশে প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং এটি আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
সোমালিয়ার মার্কিন রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি জানান, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের মূল্য দেয় এবং যেকোনো নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করতে কাজ করবে।
ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেল্লো বলেন, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান এখন শুধু ভেনেজুয়েলানদের জন্য নয়, বরং যেকোনো মানুষের জন্যই বড় ঝুঁকি।”
ডেমোক্র্যাট দল এই নিষেধাজ্ঞার তীব্র সমালোচনা করেছে।
ওয়াশিংটনের কংগ্রেস সদস্য প্রমিলা জয়াপাল বলেন, “ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের মুসলিম নিষেধাজ্ঞা এখন আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। এটি আমেরিকাকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও একঘরে করে তুলবে।”
কংগ্রেস সদস্য ডন বেয়ার বলেন, “ট্রাম্প আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতাদের আদর্শের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।”
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৭ সালে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যার আওতায় মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের (যেমন: ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া) নাগরিকদের ভ্রমণে বাধা দেওয়া হয়।
তখন সেটিকে “মুসলিম ব্যান” হিসেবে সমালোচনা করা হয়। আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সেই নীতির পরিবর্তিত সংস্করণে উত্তর কোরিয়া ও ভেনেজুয়েলার সরকারি কর্মকর্তারাও যুক্ত হন।
এই নীতিকে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন দেয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে তা বাতিল করেন এবং একে “জাতীয় বিবেকের কলঙ্ক” বলে আখ্যা দেন।
ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞা যে বিতর্ক ও আইনি লড়াইয়ের জন্ম দেবে, তা ইতোমধ্যে নিশ্চিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।