মোঃ নজরুল ইসলাম সাগর, অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: গেলো বছরের আগাম ও ভয়াবহ বন্যার কথা ভাবতেই বুক কেপে উঠে অষ্টগ্রামের প্রতিটি কৃষকের। গত বছর তারা কোন ধান ঘরে তুলতে পারেনি।
বছরটা ছিল তাদের জন্য খুবই কষ্টের। উজান থেকে নেমে আসা বানের পানিতে কোন ফসল ঘরে তুলতে পারেনি তারা। বোরো ধান তাদের একমাত্র ফসল। এখানকার প্রতিটি জমিই এক ফসলী হওয়ায় কৃষকেরা তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে ঘুরে দাড়াতে পারেনি। শোধ করতে পারেনি তাদের ঋণের বোঝা। ফসল বুনার মৌসুমে তারা আবারো স্থানীয় মহাজন ও এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে আশায় বুক বেধে ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা করে। এবার অষ্টগ্রামে বোরো ধানের চাষ হয় ২৪,১৪০ হেক্টর জমিতে। এখানে চৈত্রের শেষ সপ্তাহ থেকে ধান কাটা শুরু হয়। কিন্তু একদিকে ঘন ঘন বৃষ্টি অন্যদিকে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ। অষ্টগ্রাম হাওড়ের সমস্ত ধান ভৈরব ও আশুগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হয়। আশুগঞ্জ পাইকারি বাজারের আড়তদার শফি শিকদারের কাছে ধানের দর জানতে চাইলে তিনি বলেন-আশুগঞ্জ বাজারে প্রতি মণ মোটা ধান ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা ও প্রতি মণ চিকন ধান ৫৮০ থেকে ৬৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন- তুলনামূলক ভাবে অন্য বছরের চাইতে এবার ধানের অনেক কম।
কাস্তুল গ্রামের কৃষক মোঃ আনিস মিয়া বলেন- একদিকে ঋণের চাপ অন্যদিকে শ্রমিকের মজুরী পরিশোধ করতে আমরা কমদামেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। অথচ প্রতি মণ ধান ফলাতে আমাদের খরচ হয়েছে প্রায় সাতশো থেকে আটশো টাকা।
ভাতশালার কৃষক আক্তার হোসেন বলেন- ধান মওজুদ রাখার প্রয়োনীয় জায়গা না থাকায় এবং ঋন ও শ্রমিকের মূল্য পরিশোধ করতে আমাদের লোকসান দিয়েই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় ধান শুকাতে পারছিনা বলে ধানে চারা গজিয়েছে। সব মিলিয়ে আমরা হতাশ।
এ প্রসংগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জনাব শফিকুল ইসলাম সিএনএনবিডি২৪.কমকে জানান, আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষার জন্য আমরা কৃষকদের ধান ৮০% পাকার পরেই কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেন- ধানের দাম হওয়ার পিছনে এখানে একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। তাই কৃষকেরা এখন তাদের ধান বিক্রি না করে কিছুদিন পর বিক্রি করলে লাভবান হতে পারতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকার সাধারণ সম্পাদক রোটারীয়ান জনাব কামরুল হাসান বাবু সিএনএনবিডি২৪.কমকে জানান-হাওরের কৃষকের জন্য এই বছরের ধান খুবই গুরুত্বপূর্ণ । সফল ভাবে ধান কেটে ঘরে আনতে না পারলে কৃষকের অস্তিত্ব সংকটে পরবে ।অতি বৃষ্টি ও বৈরী অবহাওয়া ধান ঘরে তোলার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ।উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মুল্যে কৃষকের ধান বিক্রি করে খরচ নির্বাহ করতে হচ্ছে , যা মৃত্যু কুপে ঝাপ দেয়াতুল্য ।ন্যায্য মুল্যে দুর্নীতি মুক্ত পন্থায় অতি দ্রুত সরকারী ভাবে পর্যাপ্ত পরিমানে ধান কেনা শুরু হলে কৃষক কিছুটা পরিত্রান পাবে ।
আমরা "হাওর অঞ্চল বাসী" , সরকারী ভাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ন্যায্য মুল্যে ধান কেনা শুরু করার জন্য জোর দাবী জানাচ্ছি ।