হায়রে পাবনা মুক্ত দিবস: মৃত্যুর ৮ মাস পর পতাকা উত্তোলন করে গেলেন?
বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০
আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম বিশু: কী সাংঘাতিক এক খবর! ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর, একজন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর প্রায় আট মাস পরে গোরস্থান থেকে উঠে এসে হাজার হাজার মানুষের সামনে পাবনা কালেক্টরেট ভবনে পতাকা উত্তোলন করে পাবনা জেলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করে গেলেন। সে অনুষ্ঠানে আরেক জন কবর থেকে উঠে এসে হাজির হয়েছিলেন যিনি শহীদ হয়েছেন তারও কয়েকদিন আগে।
আবার ঐ দিনই মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বহু সৈন্য অস্ত্রশস্ত্রসহ পাবনা শহর ছেড়ে দলে দলে পালিয়ে গেল, ইছামতি নদীর নীচে আত্মগোপন করে হাওয়া হয়ে গেলেন? মুক্তিযোদ্ধারা এবং পাবনার মানুষজন আর খুঁজে পেলনা তাদের।
পাবনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জীবন কথা পত্রিকায় ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা ‘পিপ’ পরিবেশিত একটি খবর প্রকাশিত হয়। খবরটির শিরোনাম ছিল “গতকাল ১৮ ডিসেম্বর ছিল পাবনা মুক্ত দিবস”। ঐ খবরের জন্য কোন বিপত্তি ঘটে নাই কারণ নিজেদের পত্রিকায় নিজেরা যা খুশি তাই লিখতে পারেন। বিপত্তি ঘটেছে বানোয়াট মিথ্যা এই খবরটি যারা দিয়েছে সেই সংবাদ সংস্থা পিপকে নিয়ে। ভাবছি এদের মধ্যে রাজাকার এলো কোথা থেকে? রাজাকারদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানা থাকলেও সুকৌশলে ইতিহাস বিকৃত করার জন্য সব সময় চেষ্টা করে, এতে তারা খুব আনন্দ পায়। আমার মনে হয় এই খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর নিজেরা বসে মনের সুখে খুব হাসিঠাট্টা করে বলেছে দিয়েছি পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বানিয়ে হা হা হা। কিন্তু এভাবে বিকৃত ইতিহাস তৈরি করে শুধু মানসিক তৃপ্তি পাওয়া ছাড়া বাস্তবে তাদের মনের বাসনা এ জীবনে পূরণ হবে বলে মনে হয় না।
খবরটি না পড়লে বিষয়টি পরিস্কার হবে না। খবরটি ছিল এরকম ‘পিপ’। গতকাল ১৮ ডিসেম্বর ছিল পাবনা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক-হানাদার মুক্ত হয় পাবনা। জানা যায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর উল্লাসে মেতে উঠেছে তখনও পাবনা শহরে চলছে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর পাবনা হানাদার মুক্ত হওয়ার আগে ১৪ ডিসেম্বর দুপুর থেকে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি বাহিনীর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ১৪ ডিসেম্বর দুপুর দুইটা থেকে মিত্র বাহিনী পাবনা শহরে মর্টার সেল ও বিমান হামলা চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী চতুর্দিক থেকে পাবনা শহর ঘিরে ফেলে আক্রমণ চালায় পাক-হানাদার বাহিনীর উপর। উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় যুদ্ধ। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চতুর্মুখী আক্রমণে পাক সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং পাবনা ছেড়ে দলে দলে পালিয়ে যায। এ সংবাদে নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ ঘর ছেড়ে বাড়ির বাইরে এসে উল্লাসে ফেটে পরে। মুক্তিযোদ্ধারা ফাকা গুলি ছুড়ে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মুলতঃ এ দিনই পাবনার মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে এসে সমবেত হতে থাকে। পরে পাবনার কালেক্টরেট ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য মরহুম আমজাদ হোসেন পাবনা জেলাকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর পাবনার তৎকালীন মুক্তিবাহিনী প্রধান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম রফিকুল ইসলাম বকুল, জাতীয় পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুর রব বগা মিয়া, এডভোকেট আমিন উদ্দিন, অধ্যাপক আবু সাঈদ, মুজিব নগর সরকারের সাবেক সংস্থাপন সচিব মরহুম নূরুল কাদের খানসহ হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ।” খবরটি পড়ে মনে হচ্ছে জ্ঞানীরা ‘কতকিছু জানে রে’!
আমার ধারণা হতদরিদ্র মানুষ যারা পাবনার ফুটপাতে পড়ে থাকেন, দুনিয়ার কোন খবর রাখেন না তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেও বলতে পারবেন জাতীয় পরিষদ সদস্য আমজাদ হোসেন ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল হার্ডফেল করে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর তারিখ না বলতে পারলেও সে সময়ের পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক অত্যন্ত বলিষ্ঠ একজন জননেতা শহীদ আমজাদ হোসেন এমএনএ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকেই মৃত্যু বরণ করেছেন এ কথা জানেনা এমন কোন মানুষ পাবনায় নেই। মৃত্যুর ৮ মাস পরে কী ভাবে তিনি এসে পতাকা উত্তোলন করে গেলেন?
ঠিক এরকমই আরেকজন আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন এমপিএ, সে সময় তিনি পাবনা পৌরসভারও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাত্রে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে। নির্মম ভাবে অত্যাচার করে ২৮ মার্চ নৃসংস ভাবে গুলি করে হত্যা করে বিসিকের আর্মি ক্যাম্পে ফেলে রেখে যায় তাঁর মরদেহ। পাবনার যে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রথম শহীদ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। আমিন উদ্দিন আইন কলেজ, পৌরসভায় তার স্মরণে আমিন উদ্দিন সভাকক্ষ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ খেতাবে তাঁকে ভুষিত করেছে। এসবকথা পাবনার সর্বস্তরের মানুষ জানে। তিনি কিভাবে ১৮ ডিসেম্বর পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত হলেন পাবনা কালেক্টরেট ভবনে?
কি অদ্ভুত ব্যাপার, তাঁদের মৃত্যুর ৮ মাস পরে আবার স্বশরীরে এসে হাজির হয়েছেন হাজার মানুষের সামনে? তারা কি প্রেতদেহ ছিল? সেই উপস্থিত হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষগুলো কি মানুষ ছিল না কি প্রেতাত্মা? পিপ, দৈনিক জীবন কথার সম্পাদক এবং প্রকাশক সাহেবরা সবাই মিলে কি ভয়ঙ্কর খবর পরিবেশন করেছেন। ভুতের ভয়ে আমার হাত-পা কাপছে। ছোট বেলায় আমার দাদী-নানীর কাছে যে সব ভুতের গল্প শুনেছি সে ভুত গুলো আসতো রাত্রে, এ যে একেবারে দিনের বেলায় পতাকা হাতে এসে হাজির। বাহারে বাহ- বাজারে বাদ্য বাজা।
পতাকা উত্তোলনের সময় আরো যারা উপস্থিত ছিলেন বলে পিপ সাহেবরা লিখেছেন তারাও সেদিন সেখানে ছিলেন না। থাকবেন কি ভাবে, প্রকৃতপক্ষে সেদিন এধরনের কোন অনুষ্ঠানই হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নেতৃস্থানীয় এসব বীর যোদ্ধাদের নামোল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো ১৮ ডিসেম্বর গল্পটি যেন সকলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়। অধ্যাপক আবু সাঈদ মুক্তিযুদ্ধের ওপর অনেক বই লিখেছেন এবং পাবনার তৎকালীন ডিসি মরহুম নুরুল কাদের খান নিজেও মুক্তিযুদ্ধের সময়ের তার ভুমিকার ওপর বই লিখেছেন। ১৮ ডিসেম্বর তাঁরা কোথায় ছিলেন তাঁদের লেখা বই পড়লেই একদম মুর্খ লোক ছাড়া সবাই বুঝতে পারবেন। অপরদিকে বৃহত্তর পাবনার তৎকালীন মুক্তিবাহিনী প্রধান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম রফিকুল ইসলাম বকুল এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুর রব বগা মিয়া সর্বস্তরের মানুষের কাছে এতই সুপরিচিত ছিলেন যে তাঁরা ১৮ ডিসেম্বর কোথায় কি করছিলেন জানার জন্য যেকোন মুক্তিযোদ্ধাকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিতে পারবেন। শুধু রাজাকার এবং নকশালরা বলতে পারবে না কারণ তারা সবাই ১৪ ডিসেম্বরের আগেই পাবনা থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
সবচেয়ে সাংঘাতিক খবর তারা প্রকাশ করেছেন, মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাবনা ছেড়ে দলে দলে পালিয়ে যায়। দলে দলে মানে অগনিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান থেকে কতজন সৈন্য বাংলাদেশে এসেছিল, কতজন যুদ্ধে মারা গেছে এবং আহত হয়েছে, কতজন কোথায় সারেন্ডার করেছে এসব দলিল অনেক বইতেই উল্লেখ আছে। এই হিসাব অনুযায়ী তখন পাবনায় ছিল প্রায় ১৫০০ পাকিস্তানি সৈন্য। এতগুলো সৈন্য শহর ছেড়ে পালিয়ে গেল কোথায়? ইছামতি নদীর নীচে তো আর পালানো যাবে না,তা হলে কোথায় যাবে? পাবনা শহর ছেড়ে পালাতে হবে শুধু গ্রামের দিকে। পাবনার গ্রাম অঞ্চল সেপ্টেম্বর মাস থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। ১৬ ডিসেম্বর হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্ত ভাবে আত্মসমর্পন করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। বর্বর হানাদার বাহিনী ও তাদের বর্বরোচিত কর্মকাÐের অবসান হয়েছে। হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদসহ তখন দেশে ফিরে এসেছেন। সর্বস্তরের মানুষ বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা। এরকম সময় এতগুলো সৈন্য গ্রামের দিকে পালাতে গেলে কি ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হবে? পাকিস্তানি সৈন্য সামনে পেলে জীবন বাজি রেখে দেশের মানুষ তাদের উপর চালাত আক্রমণ। অপরদিকে সৈন্যরাও স্বশস্ত্র, নিজেদের জীবন বাঁচাতে তাদের শেষ বুলেটটি তারা ব্যবহার করতো। এতো বিপুল সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্যের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে কি ভয়ঙ্কর অবস্থার সৃষ্টি হয় তা যদি দালালেরা জানতো তাহলে এই গল্প কখনও পত্রিকায় লিখতো না। ঘটনাটি মিথ্যা বানোয়াট না হয়ে যদি সত্যি হতো তাহলে ১৮ ডিসেম্বর পাবনায় ঘটতো বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। পাবনার হাজার হাজার মানুষ সেদিন শহীদ হতেন হানাদার বাহিনীর গুলিতে। স্বজন হারানোর করুণ বেদনায় ঐ দিন পাবনার ঘরে ঘরে পড়ে যেত কান্নার রোল। সর্বস্তরের মানুষের বুকফাটা আর্তনাদই প্রতি বছর স্মরণ করিয়ে দিত ১৮ ডিসেম্বর পাবনা মুক্তদিবসের ভয়ঙ্কর স্মৃতি। অপরদিকে পাবনার মানুষের হাতে নিহত হতো প্রায় ১৫০০ পাকিস্তানি সৈন্য, তাদের টুকরো টুকরো লাশ খেতো শেয়াল কুকুরে। পাবনা মুক্ত দিবস লেখার জন্য কোন দালালের প্রয়োজন হতো না।
পতাকা উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন বলে তারা যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামোল্লেখ করেছেন তাদের মধ্যে সবাই মৃত্যুবরণ করলেও তৎকালীন এমএনএ অধ্যাপক আবু সাঈদ এখনও বেঁচে আছেন। তিনি সেদিন কোথায় ছিলেন তাঁর কাছে শুনলেই থলের বিড়াল সব বের হয়ে যাবে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ১৮ ডিসেম্বর পাবনায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কোন যুদ্ধই হয়নি। এত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ হলো অথচ পাবনার কোন মুক্তিযোদ্ধা বা পাবনার মানুষ কেউ তা জানতে পারলনা, শুধু রাজাকাররা জানতে পারল? এখনও অনেক মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে।
১৮ ডিসেম্বর মুক্তদিবস অথচ পাবনার কোন সংগঠন তা পালন করেনি। অন্য কোন সাংবাদিক এই খবরটি পরিবেশনও করেননি। শুধু পিপ সাহেবরা বিশাল দায়িত্ব নিয়ে পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করেছেন। একটি সংগঠন দিবসটি পালন করেছে আর পিপ খবরটি সংগ্রহ করে পত্রিকায় দিয়েছে বিষয়টি তা নয়। নিজেরাই খবর তৈরি করেছেন আবার নিজেরাই পত্রিকায় দিয়েছেন। সে খবরও জামায়াতের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে অন্য কোন পত্রিকায় হয়নি।
পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জল, পাবনার আপামর জনসাধারণ তা জানে। ১৮ ডিসেম্বরের বানোয়াট গল্প তৈরি করে তা ঢেকে দেয়ার চেষ্টা করছেন কেন? আমি আশ্বর্য হয়ে যাই, পাবনা জেলার মানুষ যাদের নিয়ে গর্ব করে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আমজাদ হোসেন এমএনএ এবং শহীদ এ্যাডঃ আমিন উদ্দিন এমপিএ, মরহুম আব্দুর রব বগা মিয়া এমপিএকে যারা চেনেনা, কে এমপিএ এবং কে এমএনএ ছিল তা যারা জানে না, সেই জ্ঞানীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখে পাবনার মানুষকে উদ্ধার করতে চায় কেন? আপনাদের এসব গল্প লেখার উদ্দেশ্য কি ভাই? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন না কি? এত দরদ কেন হলো? বিষয়টি পাবনার সর্বস্তরের মানুষের চিন্তা করতে হবে।