আজ বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪ ||
২৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ১২:৪১ অপরাহ্ন
সাধারণ মানুষের দৃষ্টি গণতন্ত্রের চেহারার দিকে নয়, দেশের চেহারার দিকে!
বৃহস্পতিবার, ১২ মে, ২০২২
সোহেল সানি: সাধারণ মানুষের দৃষ্টিনিবদ্ধ, গণতন্ত্রের চেহারার দিকে নয়, দেশের চেহারার দিকে। গণতন্ত্রের তন্ত্রমন্ত্রে নয়, উন্নয়নের তোড়জোড়েই সাধারণ মানুষের মাঝে শেখ হাসিনার প্রতি নাভিশ্বাস ওঠেনি।
একটানা ১৩ বছরের উন্নয়ন শেখ হাসিনাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে শাসনক্ষমতায়। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কল্যাণে আওয়ামী লীগ টিকে আছে, এমন দাবি করা হলেও তা অত্যুক্তি হবে না।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকার নেপথ্যে শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ কোনটি যদি বলা হয়, তাহলে আমি বলবো, গণতন্ত্রের চেহারা যাইহোক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত থেকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি অবমুক্ত করাই হলো তার সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এটাকে সার্বিক অর্থে আওয়ামী লীগের বড় উন্নয়নও বলা যেতে পারে। কেননা এই দখলমুক্তির মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র নিরাপদ জীবনে ফিরে এসেছে। সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র মাঝেমধ্যে আহত হলেও অন্তত হত্যার শিকার হয়নি।
২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি সর্বসাধারণই আস্থা রেখেছিল। কিন্তু সেই আস্থায় ধস নামার কারণেই যে পরবর্তী দুটি নির্বাচনের চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া কোন শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর নির্বাচনী বৈতরণী পার পাবার নিশ্চয়তা আছে বলে মনে হয় না। বরং তাদের পরাজয়ের সম্ভাবনাটাই বেশি। আর এসব শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীদের বিজয় নিশ্চিত করতে গিয়েই গত দুটি নির্বাচনই বিতর্কের মুখে পড়েছে। অথচ ব্যক্তি শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা এতটাই বেড়েছে যে, যেকোনো আসনে যে কারো বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া আজ আর কঠিন নয়। এরকম নিনের জনপ্রিয়তার পরও শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর বিজয় সুনিশ্চিত করতঃ নানাবিধ নির্বাচনী কৌশল গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে প্রতিপক্ষের পাশাপাশি জনমনের সন্দেহ সংশয় কাটানো যাচ্ছে না।
এদিকে সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগসহ সবগুলো অঙ্গসংগঠনের সম্মেলনের দিকে ঝুঁকছেন। ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের শক্তির হাতিয়াররূপে পরিচিতি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষকলীগের মতো সংগঠনগুলোর মাথা কেটে ফেলে সম্মেলনে করা হলেও কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। এ বিষয়টি মাথায় রেখে হাইকমান্ডকে সম্ভাব্য নেতৃত্ব নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগের গোটা নেতৃত্ব হাইকমান্ডের হাতের মুঠোয় থাকলেও তাকে কখনো কখনো অগ্নিমূর্তিধারণ করতে দেখা গেছে। এবারের সম্মেলনেও যে সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে পরিবর্তন আসছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণেই দলীয় স্থবিরতা হয়তো চোখে পড়ছে না। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে নেতৃত্বের ভগ্ন চেহারাই ফুটে ওঠে।
আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে নির্বাচনমুখী করার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। দলকে নির্বাচন উপযোগী করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও আমূল পরিবর্তন আনবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনেরও তোরজোর শুরু হয়েছে। বর্তমান নগর নেতৃত্বের প্রতিও আস্থা রাখতে পারছেন না হাইকমান্ড। নতুন নেতৃত্বের আকাঙ্খায় তৃর্ণমূলের কর্মীরা আবারও উজ্জীবিত হচ্ছে। সারাদেশেই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে জেলা, মহানগর, উপজেলা, ওয়ার্ড ইউনিয়নের নেতৃত্ব।
সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে শুধু নয়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও এবার বিরাট পরিবর্তন আসবে। দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্থলে নতুন মুখ নির্বাচনের চিন্তাভাবনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন অনেকের নাম উঠে আসছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের এ কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার বাইরে নেতাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু সে নিয়েও প্রশ্ন কর্মীদের মুখে মুখে।
মন্ত্রী নেতাদের যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। প্রকৃত কর্মীদের বাদ দিয়ে মন্ত্রী নেতাদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশকারীদের প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরকারের এই জনপ্রিয়তার কারণ যদি হয় উন্নয়ন, তাহলে বলতেই হয় সরকার টানা ক্ষমতায় রয়েছে বলেই তা সম্ভব হয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত যখন বাস, দোকানপাটে পেট্রোলবোমা মারায় লিপ্ত ছিলো, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বার্ন হাসপাতালে প্রতিষ্ঠা করেন। খালেদা জিয়ার সরকারের আমলে দেশ যখন দুনীতিতে হ্যাট্রিক করে শেখ হাসিনার নাম তখন বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রীর তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি জামায়াত যখন কল্পনায় মওলানাকে আকাশে দেখে, তখন শেখ হাসিনা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পাঠায়।
খালেদা জিয়া যখন বলেন পদ্মা সেতু সম্ভব নয়, শেখ হাসিনা তখন দৃশ্যমান করেন এবং উদ্বোধনের দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করেন।
খালেদা জিয়ার সরকার যখন বিদ্যুতের খাম্বা তৈরি করে তখন শেখ হাসিনা সরকার রাশিয়ার অর্থায়নে পৃথিবীর সর্ব বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেন।
বিএনপি জামায়াত সরকার যখন সারের দাবিতে বিদ্রোহ করা কৃষকের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে, তখন শেখ হাসিনা সরকার বিনামূল্যে সার বিতরণ করে।
বিএনপি জামায়াত যখন ক্ষমতায় থেকে বাংলা ভাই, শায়খ রহমানের আবিষ্কার করে শেখ হাসিনা তখন দেশকে জঙ্গিমুক্ত করে।
খালেদ জিয়া সন্ত্রাসীদের মদদ দেন, শেখ হাসিনা তখন সাকিব মাশরাফিদের খোঁজেন।
বিএনপি যখন যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে এক হয়, শেখ হাসিনার সরকার তখন একেক করে ওদের ফাঁসি কার্যকর করে। খালেদা জিয়া যখন বঙ্গবন্ধুর খুনীদের সংসদে বসান, তখন শেখ হাসিনা সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার রাজনীতির পথ বন্ধ করে দেন। খালেদা জিয়া ক্যান্টমেন্টে বসে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ধ্বংস করেন, শেখ হাসিনা তখন ক্যান্টমেন্টকে রাজনীতিমুক্ত করে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে তার সুমহান মর্যাদায় আসীন করেন।
বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট যখন চিৎকার করে জনগণকে বলে মাগো তোমার একটি ভোটে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে, শেখ হাসিনা তখন বলেন, মাগো তোমার একটি ভোটে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা জনগণ সেটি আজ অনুভব করছে। প্রকৃতপক্ষে লোক দেখানোর গণতন্ত্রে নয়, সাধারণ মানুষের কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমূল বদলে যাওয়া দেশের চেহারাটা। লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।