আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ||
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন
দেহের একখণ্ড মাংসপিণ্ড যখন দূষিত হয়,পুরো দেহ দূষিত হয়!
শুক্রবার, ১৯ মে, ২০২৩
ধর্ম ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভে অন্তর পবিত্র বা আত্মশুদ্ধির বিকল্প নেই। পবিত্রতা শুধু বাহ্যিক পবিত্রতা নয় বরং বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, পরিবেশের পবিত্রতা বুঝায়।
এক কথায় সর্বক্ষেত্রে পবিত্রতা অবলম্বনের শিক্ষা আমরা পবিত্র কুরআন থেকেই পেয়ে থাকি। কেননা আল্লাহতায়ালা বলেন, যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কোনো অবস্থান নিও না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়, এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ৩৬)।
আমরা যদি নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করি তাহলে প্রত্যক্ষ করব আমাদের কর্মময় জীবনের বেশিরভাগই চলছে অপবিত্রতার মধ্য দিয়ে। কেননা আমি যখন কোনো বিষয়ে ওয়াদা করি তখন তা ভঙ্গ করছি, ব্যবসায় অধিক মুনাফা লাভের জন্য বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছি।
এক কথায় এমন কোনো পাপ আছে কি যা আজ আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে না? তাই আমাদের প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির। আমাদের অন্তর পবিত্র না করে যত ভালো কাজই করি না কেন কোনো লাভ নেই। রোজা রাখলাম,নামাজ আদায় করলাম, দান-খয়রাত করলাম কিন্তু নিজ আত্মশুদ্ধির দিকে দৃষ্টি দিলাম না এতে কিন্তু আমার কোনো লাভ নেই।
কেননা হাদিস শরিফে এসেছে, জেনে রেখ, মানুষের দেহের মধ্যে একখণ্ড মাংসপিণ্ড আছে, যখন তা সংশোধিত হয়, তখন গোটা দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দূষিত হয়, তখন পুরো দেহ দূষিত হয়ে যায়। মনে রেখ, সেটাই অন্তর। (সহিহ বুখারি)।
মহানবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের আকৃতি ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও সৎকর্মের প্রতিই লক্ষ করেন। এরপর রাসূল (সা.) অন্তর দেখানোর জন্য আঙুল দিয়ে নিজের বুকের দিকে ইশারা করেন। (সহিহ্ মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৪)।
আমরা আমাদের ওয়াজ নসিহতে এবং বিভিন্ন বক্তৃতায় অপরকে অনেক ভালো জ্ঞান দিয়ে থাকি কিন্তু নিজেই তা পালন করি না। এমনটি হলে সেই উপদেশ কখনো কাজে আসবে না। আমরা যদি নিজে সৎভাবে চলি আর অন্যদেরও সৎপথে চলার নির্দেশ দেই, তবেই একটি আদর্শ সমাজ ও দেশ গড়তে পারে। তাই প্রথমে আমাদের নিজেদের সৎ ও পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে।
বিশেষ করে আল্লাহতায়ালা যেসব কাজ হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। তাই প্রথমে নিজে সৎ ও পবিত্র হৃদয়ের হব, সব ধরনের হারাম কাজ পরিত্যাগ করব, তারপর অন্যকে সৎ হতে উৎসাহিত করব। চলার পথে প্রতিনিয়ত অনেক মন্দ বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে পড়ে। আমাদের উচিত, সেগুলোকে প্রতিহত করা।
যেভাবে মহানবি (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি খারাপ কিছু দেখ তাহলে নিজ হাতে তা দূর কর, আর তা নিজ হাতে না পারলে নিজ জিহ্বা দ্বারা একে মন্দ বলে নিষেধ কর, আর তাও যদি না পার, তাহলে মনে মনে একে ঘৃণা কর ও দোয়া কর আর এমন করাটা বিশ্বাসের দিক থেকে সর্ব নিম্ন পর্যায়ের। (মুসলিম)।
নৈতিক অধঃপতনের এক চরম সীমায় আজ আমরা বসবাস করছি। যে দিকেই তাকাই, শুধু মন্দকর্মই যেন ছেয়ে আছে। আজ আমরা পার্থিব জগতের মোহে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছি। ভালো-মন্দের পার্থক্য করা ভুলে গেছি। পাপ করতে করতে এমন হয়েছে যে পাপকে পাপই মনে হয় না।
হাদিসে সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেন, আমি আমার উম্মতের একদল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতো ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ)।
আসলে মানুষের সামনে নিজেকে আমরা অনেক সৎ ও মুমিন বানিয়ে রাখি কিন্তু আমাদের হৃদয়গুলো পাপে ভরপুর। যার ফলে আল্লাহর রহমত থেকে আমরা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। রহমতের বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের ওপর আর বর্ষিত হচ্ছে না। বিপদের পর বিপদ আসছে, একটি বিপদ যাওয়ার আগে আরেকটি বিপদ উপস্থিত। এসব দেখেও আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না যে আমাদের আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্বময় করোনায় লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, এটি প্রত্যক্ষ করেও যদি আমি আত্মশুদ্ধির চেষ্টা না করি তাহলে আমার চেয়ে বোকা আর কে আছে। পাপ কাজ পরিহার করে সৎ পথে চলার সময় কি এখনো আসেনি? অথচ আল্লাহ এবং তার রাসূল (সা.) আমাদের সতর্ক করে গেছেন আমরা যেন সৎ কাজে লিপ্ত থাকি। আমরা যদি সৎকাজ ও পবিত্রতা অবলম্বন করি, তাহলে আল্লাহ পাকের কৃপার চাদরে আমরা আবৃত থাকব আর আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকলে দুনিয়ার বিপদ আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
মানুষ যখন আল্লাহতায়ালার জন্য জাগতিক আরাম-আয়েশ, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকে তখন সে তার নফসকে পুণ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে অধিক শক্তি পায়।
কঠিন বিষয় হলো আধ্যাত্মিক ও চারিত্রিক পরিবর্তন সাধন করা। আল্লাহ পাক আমাদের সব ধরনের মন্দ থেকে বেঁচে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট