শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪
সফিক আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের দাবি, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা ঘটেনি৷ তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, এ সময়ে সারা দেশে কমপক্ষে ৪৯টি এমন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কারণ, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া যে-কোনোভাবে যে-কোনো হত্যাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড৷
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে গণপিটুনিতে প্রাণ গেছে ৪৯ জনের৷ পুলিশ সদর দপ্তরের দাবি, তারা এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে৷ তবে সারা দেশে কমপক্ষে ৪৯ জনকে পিটিয়ে মারা হলেও তিনটি ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রামের দীঘিনালার ঘটনার পর মঙ্গলবার আবারও পাহাড়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষকে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ তারপরও সংঘর্ষ এবং বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় চোর সন্দেহে মো. মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ তার জের ধরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি বাঙালি সংঘর্ষে চার জন আদিবাসী নিহত হন৷ অনেক ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ আগুনে পুড়ে যায় অনেক বাড়ি-ঘর৷
মানবাধিকারকর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেছে৷ দুই মাসেও তারা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারছে না৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না৷”
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কোনো কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির নানা ধরনের দায়িত্বহীন কথাও পরিস্থিতি খারাপ করছে৷
গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে মারা হয় দুজনকে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল হোসেন নামের এক যুবককে চোর অপবাদ দিয়ে রীতিমতো পরিকল্পনা করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে৷ এর আগে ৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় পঙ্গু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে৷
এদিকে চট্টগ্রামে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নাচ-গান করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার এক মাস পর সেই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷
আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর এই ৯ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৮১ জনকে গণপিটুনি বা পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে৷ তার মধ্যে আগস্ট মাসে হত্যা করা হয়েছে ২১ জনকে আর সেপ্টেম্বর মাসে ২৮ জনকে৷ অর্থাৎ, এই দুই মাসে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৪৯ জনকে৷ আগের সাত মাসে এমন ঘটনা অনেক কম৷ ওই সাত মাসে ৩১ জনের মৃত্যু হয় গণপিটুনিতে৷
গণপিটুনির বাইরে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর হেফাজতেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে পুলিশ ও যৌথবাহিনীর হেফাজতে৷
তবে নবনিযুক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের দাবি, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যার ঘটনা ঘটেনি৷
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘‘বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়া, সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হোক আর গণপিটুনিতে হোক, সব হত্যাকাণ্ডই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।