ছাত্র-জনতার বিপ্লবে সরকার পরিবর্তন ছাড়া ‘অন্য কিছুই’ বদলায়নি
রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: ছাত্র-জনতা বিপ্লবে শুধু সরকার পরিবর্তন ছাড়া ‘অন্য কিছুই’ বদলায়নি বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বর্তমান সময়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয়, তার মাসুল কে দেবে?’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের সকল মামলা যদি উঠে যেতে পারে, তাহলে এখন কেন আমাদের মামলা উঠছে না। আপনারাই বলেছেন, আমাদের ওপরে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে অপমানিত করা হয়েছিল। এতে গোটা জাতি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে এতো অত্যাচার-নির্যাতন-মিথ্যা মামলা কেন আপনাদের বিবেচনায় আসছে না।
গয়েশ্বর আরও বলেন, আপনাদের (অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা) মিথ্যা মামলার ব্যাপারে যদি আমরা সমব্যথিত হতে পারি, সোচ্চার হতে পারি, তাহলে আপনারা দায়িত্ব গ্রহণের পরে আমাদের মামলাগুলো আগের মতোই আছে, আমাদের আগের মতোই আদালতে যেতে হচ্ছে। এই কারণেই আমি বলেছি, সরকার বদলে গেছে কিন্তু তুমি-আমি একই আছি, যা ছিলাম আগে।
বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, মান্না দে‘র একটি গান… তুমি কি সেই আগের মতোই আছ, নাকি অনেকখানি বদলে গেছ…..। গানে শুরুটা এরকম যদি বলি… সরকার বদলিয়ে গেছে, তুমি-আমি একই আছি, আগে যা ছিলাম…। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। মানুষের জন্যে, অধিকারের জন্যে দীর্ঘ ১৬ বছর যারা রক্ত দিয়েছে, যারা গুম হয়েছে, যারা সন্তানহারা হয়েছে, যারা পিতৃহারা হয়েছে, যারা মা হারা হয়েছে এরা সব হারিয়েছে। মাঝখানে শেখ হাসিনা নাই, সব আগের মতোই আছে।
জাতীয় প্রেসক্লা্বের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রচার দলের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে ‘দুর্যোগ প্রশমন বিএনপির ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রচার দলের সহসভাপতি রুহুল আমিন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির কর্মকান্ডের ওপরে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়।
গয়েশ্বর বলেন, এখনও নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেননি, কিন্তু জনগণের ভোট করতে হলে তো নির্বাচন কমিশন লাগবে। যেখানে এখনও উইদাউট নির্বাচন কমিশন সেখানে আমি কীভাবে বিশ্বাস করব—আপনি নির্বাচন করবেন? কমিশনের পর কমিশন…আরেকটা কমিশন হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা…জাস্ট ইজ এ টাইম কিলিং, নাথিং মোর। নির্বাচন যত শিগগিরই হবে জনগণের পার্টিসিপেশনের জোয়ারের রায়ে মধ্যে হবে। এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে বাংলাদেশে নির্বাচনের অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে জনগণ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবে। কিন্তু মরা মানুষ উপস্থিত হবে না।
২০০৭ সালে এক-এগারোর ঘটনা প্রবাহের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এক-এগারোর যে বিরাজনীতিকরণ বা রাজনীতিবিদদের অপসারণ করা বা রাজনীতি অঙ্গন থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া…তখন রাষ্ট্রশক্তি গ্রহণ করা সংস্কারের নামে কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে এগুলো অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে বাস্তবরূপ এখনও সংস্কার শব্দ ঘুরছে। তিনি বলেন, আজকে ১৬ বছর পর জনগণের একটা দাবি…একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। একইসময়ে সেই নির্বাচনের জন্য যে এতো রক্ত দিল…সব কিছু করল…আজকে আপনাদেরকে সেই যে জনগণের আকাঙ্খা, ভোটাধিকার, স্বাধীন ভোট…যাকে খুশি তাকে দেব…. অন্য কোনো দাবি নেই। জাস্ট আপনি একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবেন সুন্দর করে।
আজকে যে আকাঙ্খা কোটা বৈষম্যবিরোধী থেকে শুরু করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার যে আন্দোলনটা, সেই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল সাংঘর্ষিক না; একই ধারার আন্দোলন। কিন্তু বর্তমান সরকার তাদেরকে (ছাত্রদের) আলাদা করতে চান কেনো? ছাত্ররা সচিবালয় ঘেরাও করবে কেনো…কিছু থাকলে তারা সমাবেশ করে সরকারকে সর্তক করবে। আন্দোলন শেষ আমরা তো চলে গেছি…আমাদেরকে কেউ ডাকেনি। ১৯৬২ সালে আমি ক্লাস এইটের ছাত্র তখন থেকে শিক্ষা আন্দোলনে ছিলাম…তখন থেকে সেই রাজনীতি করছি। আমি বলব, তাই ছাত্রদের আলাদা করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। বৈষম্যবিরোধী যদি আরেকটা বৈষম্য সৃষ্টি হয়, তার মাসুল কে দেবে?