মনে হয়েছে সে সবসময় জীবনী শক্তি নিয়ে টগবগ করছে। কোনো কিছুতে ভেঙে পড়ার লোক ছিল না, লড়াই করেছে শেষ পর্যন্ত। আজকে সে থাকলে সবচেয়ে খুশি হতো ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ দেখে।
আজ শনিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে কূটনীতিক সাবিহউদ্দিন আহমেদের স্মরণ সভায় তার বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। সাবিহউদ্দিনকে ‘সত্যিকারের দেশপ্রেমিক’ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান তাঁর নিকট সহকর্মীসহ নানা পেশার নাগরিকরা। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারের কনফারেন্স হলে প্রয়াত কূটনীতিকের পরিবারের পক্ষ থেকে এই স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাবিহউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার শাসনামলে সাবিহউদ্দিন আহমেদ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার ছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সাবিহউদ্দিন আহমেদসহ আমরা যারা ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলাম আমাদের একটা লক্ষ্য ছিল, এই সমাজটাকে পরিবর্তন করব, আমরা বদলে দেবো। সেটা সেই সময় সম্ভব হয়নি… সাবিহ চলে গেছেন সরকারি চাকরিতে.. সরকারি চাকরিতে গেলেও কখনো সেই লক্ষ্য থেকে সরে যায়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সাবিহ যেখানেই ছিল সেখান থেকেই দেশের জন্য কাজ করেছে, জনগণের জন্য কাজ করেছে। সবচেয়ে বেশি আমার মনে পড়ে, যখন তিনি আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কাজ করেছেন তখন দেখেছি, তিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করেছেন।
শেখ হাসিনার শাসনমালে সাবিহউদ্দিন সরকারের রোষানলে নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওই সময়ে তার ওপরে প্রচন্ড আক্রমণ হয়েছিল… রিয়াজ রহমান সাহেবের গুলি লেগেছিল, সাবিহউদ্দিন আহমেদের গাড়িটা পুড়িয়ে দিয়েছিল। এই সময়গুলো আমরা পার করেছি। বহুবারই গ্রেপ্তার হওয়ার মুহূর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে…সে ভিকটিম হওয়ার কথা ছিল কিন্তু হয়নি। তার চলে যাওয়াটা আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা যারা এক সাথে ছিলাম তাদের কাছে এটা বেদনার। সাবিহর ছবিটা এখানে দেখে আঁতকে উঠলাম।
অর্থ উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সাবিহ উদ্দিন ছিলেন রিয়াল ন্যাশনালিস্ট। দেশ ও জনগণের প্রশ্নের কোনো কম্প্রোমাইজ নেই। আন কম্প্রোমাইজিং ছিলেন। এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আমরা হারিয়েছি, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, সিরাজুল ইসলাম সবুজ…। তার পরিবারের জন্য দোয়া করি।
অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বলেন, সাবিহ শেষ দিন পর্যন্ত দেশের কথা ভেবেছেন, দশের কথা ভেবেছেন। তার মধ্যে স্বার্থপরতা ছিল না। দেশপ্রেমের প্রশ্নে কোনো আপস তিনি করেননি। বাংলাদেশে খুব মানুষই পারে যে, আপন স্বার্থ ভুলে দেশ ও জনগণের স্বার্থ নিয়ে কাজ করা। তিনি সব সময়ে এটা লালন করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়েন সঙ্গে সম্পৃক্ত হন সাবিহউদ্দিন। লেখাপড়া শেষে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। তিনি তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার যোগাযোগমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন সাবিহউদ্দিন।
জিয়াউর রহমানের আমলে সাবিহউদ্দিন জ্বালানিমন্ত্রী আকবর হোসেন, এইচএম এরশাদের আমলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খানের একান্ত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হন সাবিহউদ্দিন আহমেদ। সেই দায়িত্ব পালন শেষে আবার তথ্য ক্যাডারে ফিরে যান। ২০০১ সালে সাবিহউদ্দিন আহমেদ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সাবিহউদ্দিন আহমেদ বিএনপির রাজনীতি সক্রিয়ভাবে যোগ দেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন।
প্রয়াত সাবিহউদ্দিন বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের ওপরে স্মৃতিচারণ করেন প্রবীণ সাংবাদিক, সম্পাদক শফিক রেহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মাহফুজ এনাম, এবিএম শাহেদ আখতার, প্রয়াত সাবিহউদ্দিন আহমেদর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদসহ অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার নাগরিকগণ।
প্রয়াত সাবিহউদ্দিনের সহধর্মিণী রওনক আহমেদ, ছেলে সাইয়াব আহমেদ, বিএনপির মহাসচিবের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগমসহ নিকট স্বজনরাও স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন।