তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, শুধু নির্বাচনের জন্য দুই হাজার মানুষ জীবন দেয়নি। অর্ধলাখ মানুষ রক্ত দেয়নি।
এই মানুষগুলো বিগত ১৬ বছরে বিরক্ত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল এ্ করাপটেড সিসটেমগুলোর জন্য। এগুলোর যৌক্তিক সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনে যাওয়া উচিত।
সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সারজিস আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনও একটি সিস্টেম, যা গত ১৬ বছরের সব থেকে ব্যর্থ সিসটেম। সেই কমিশন সংস্কার না করে শুধু একটি ভোটর তালিকা দিয়ে, বিভিন্ন প্রশাসনে লোক সেট করে দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
সারজিস আলম বলেন, শুধু একটা নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে না। এর পাশাপাশি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একটা সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে। তা না হলে নির্বাচন দিলে আবার জবরদখলের ঘটনা ঘটতে পারে। ক্ষমতার অপব্যবহার হতে পারে। আবার এই নির্বাচন ঘিরে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেটার সমাধানের জন্য একটা বিচারিক প্রক্রিয়া প্রয়োজন। তাই বিচারব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। গত ১৬ বছরে নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল বলে মন্তব্য তার। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের পর ক্ষমতায় এসে সবাই তাদের দেওয়া কথা ভুলে যায়। সারজিস বলেন, যে সংবিধান আমাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলো রক্ষা করতে পারেনি, সেখানেও আমাদের জায়গা থেকে আমরা পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এবং তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মনে করি, এই সংবিধানেও সংস্কার প্রয়োজন। আমরা কখণও বলছি না, সব সংস্কার করে আপনারা যান। তবে, মিনিমাম সংস্কার প্রয়োজন। যে সিসটেমগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত তা সংস্কার করেই এই অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষমতা থেকে যাওয়া উচৎ।
অভ্যুত্থান কিছু লোক দিয়ে হয়নি মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, যেই ফ্যাসিস্ট সরকারকে ১৬ বছরে বাংলাদেশের নামিদামি রাজনৈতিক সংগঠন নড়াতে পারেনি, সেই শেখ হাসিনা কিছু লোকের জন্য এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। পুরো বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল বলে অভ্যুত্থান ঘটেছিল এবং শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন।
সারজিস আলম জানান, সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৬০০ জনের বেশি শহীদের পরিবারের তালিকা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করে নির্বাচিতদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদানের চেক দেওয়া হচ্ছে। সিলেট বিভাগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ১৮ জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৫ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।
এর আগে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।