আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ||
২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে
বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনে বিক্ষোভ ও হানাহানির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না, যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি। নিজের ঘরেই যদি বিভেদ থেকে যায়, আমরা সেটা কখনোই ঠিক করতে পারব না।
তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। ’
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কারাগারে গেছে, নির্যাতিত হয়েছে। সেই মানুষগুলো ২০২৪-এর ৫ আগস্ট আরেকটি বিজয় অর্জন করেছে। সেই বিজয় অর্জন হয়েছে রাজপথে অনেক রক্তের মধ্য দিয়ে, অনেক প্রাণের ভেতর দিয়ে। কিন্তু তার ফল কি এই বাংলাদেশ? তিন মাস হয়নি, এখনই রাস্তায় রাস্তায় লড়াই শুরু হয়েছে। একজন আরেকজনের বুকের রক্ত ঝরাচ্ছি। এখন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আক্রমণ করছে।’
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই কয়টা দিনে আমরা খুব চিন্তিত, উদ্বিগ্ন, ভয়াবহভাবে উদ্বিগ্ন। আপনি চিন্তা করতে পারেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে! আপনি চিন্তা করতে পারেন, যে মুক্ত স্বাধীন মিডিয়ার জন্য আমরা এত দিন লড়াই করলাম, তার অফিস পুড়িয়ে দিচ্ছে! এই বাংলাদেশ তো আমরা দেখতে চাই না, আমি অন্তত চাই না।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কী উন্মাদনা! কিছুসংখ্যক মানুষ আছেন...আপনাদের সোশ্যাল মিডিয়া আমি দেখি না সহজে। কিন্তু যখন দেখি, আতঙ্কিত হই। পুড়িয়ে দাও জ্বালিয়ে দাও—এ ধরনের কথাবার্তা। চিন্তা করতে পারেন, কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। আমরা কি বুঝি আমাদের ভয়টা কোথায়, আতঙ্কটা কোথায়? আমরা কি বুঝি আততায়ী কোথায় ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের পেছনে। বুঝি না, বুঝলে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা আমাদের মুখ দিয়ে বের হতো না।’
হতাশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের, কিছুসংখ্যক মানুষ—তাঁরা নিজেদের অত্যন্ত জনপ্রিয় সবচেয়ে দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর গোটা জাতিকে আজকে তারা বিভাজনের দিকে উসকে দিয়ে একটা অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।’
কারও নাম উল্লেখ না করে বিএনপির মহাসচিব উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন, আমি কারও নাম বলব না। কারও নাম বলতে চাই না। আপনারা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করবেন যে যারা আজকে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলছে, অনৈক্যের দিকে ঠেলছে, তারা আমাদের আসলে শত্রু না মিত্র। এ জিনিসগুলো বুঝতে হবে। আমি কথাগুলো ইচ্ছে করেই আজকে তুলে ধরলাম।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি ১৪-১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, বহুবার জেলে গেছি, যেকোনো সময় আবারও জেলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। কিন্তু আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাই না। আমি যা বিশ্বাস করি, আমার দল যা বিশ্বাস করে, আমি সেই কথা আমার প্রাণ গেলেও আমি বলব। আমি বিশ্বাস করি, উদারপন্থী গণতন্ত্রে, বিশ্বাস করি বাক্স্বাধীনতায় ভোটের স্বাধীনতায়। আমি জানি, অনেকে অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আমি এতটুকুও চিন্তা করি না। কারণ, আমরা রাস্তায় থেকে লড়ে লড়ে এই জায়গায় এসেছি। সময়–সুবিধামতো পালিয়ে যাই না আমরা, সামনেই দাঁড়াই।’
সমাজে ঘৃণা ও বিভাজন দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা এই সমাজের শ্রেষ্ঠ লোকগুলো বসে আছেন। ছাত্রজীবনে আপনারা শ্রেষ্ঠ ছিলেন, কর্মজীবনেও শ্রেষ্ঠ। তাই আপনাদের সামনে এই প্রশ্নটা তুলছি। আর কত এই বিভাজন নিয়ে, আর কত ঘৃণা নিয়ে অমরা বাংলাদেশকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা করব। বারবার টেনে তোলা হবে, আবার পড়বে ঘৃণা নিয়ে। দানবীয় শক্তি দিয়ে আবার উঠবে, আবার পড়বে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি এই কথাটা আজকে এ জন্যই বলছি, ডা. মিলন যে প্রাণ দিয়েছেন। এখানে আমরা সবাই তাঁর অনেক গুণগান করলাম। আমাদের কী দুর্ভাগ্য, কী ব্যর্থতা—আমরা মিলনের সেই আত্মত্যাগ সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। তাঁরা ১৯৯০ সালে প্রাণ দিয়েছিলেন ভোটের অধিকারের জন্য, স্বৈরাচার দূর করার জন্য। আর আজকে এই ২০২৪ সালে ভোটের অধিকারের জন্য যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ কোন জাতি আমরা। এবার যে সুযোগ হয়েছিল সবাই মিলে একসঙ্গে একজোটে একটা পরিবর্তন নিয়ে আসার। ছেলেরাও ছিল, আমরাও ছিলাম।’
আক্ষেপ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনটা মাস হয়নি এখনো, এর মধ্যে আমাদের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই চেহারা নিয়ে কোনো দিনই সাফল্য অর্জন করা যায় না—যতই বড় বড় কথা বলি, যতই লম্বা লম্বা বক্তৃতা করি।’
ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মো. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। আরও বক্তব্য দেন ফরহাদ হালিম ডোনার, ড্যাবের মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি এ কে এম আজিজুল হক প্রমুখ।