রায়ে আদালত বলেন, মামলার বিষয়বস্তু দেখে মনে হয়েছে, এ মামলা অসৎ উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আদালত বলেন, এ রায় খালেদা জিয়াসহ সব আসামির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অপর আসামি তারেক রহমানসহ পলাতক সব আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলো।
সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের ফলে মামলায় তারেক রহমানসহ অপর আসামিরা খালাস পাবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। রায়ের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার পেয়েছেন। তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠায় শেখ হাসিনা।
এর আগে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার আপিলের দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে এ মামলার রায় দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠায় আওয়ামী লীগ সরকার।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘আদালত অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে উভয়পক্ষকে সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের শেষ পর্যন্ত আবেদন ছিল আপিল মঞ্জুর করা এবং হাইকোর্টে যে সাজা বাড়িয়েছে, পাঁচ বছরের সাজা ১০ বছর, সেটাও আমরা বাতিল চেয়েছি। আমরা বলেছি, যেহেতু প্রধান অভিযুক্তই থাকে না এবং সঙ্গে যারা আপিল করেননি (তারেক রহমান), অন্যান্য যাদের এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে, প্রত্যেকে খালাস পাওয়ার এখতিয়ার রাখে।’
দুদকের আইনজীবী মো. আসিফ হাসান আদালতকে বলেছিলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা কিন্তু আত্মসাৎ হয়নি। জাস্ট ফান্ডটা মুভ হয়েছে, সুদে-আসলে অ্যাকাউন্টেই টাকাটা জমা আছে। কোনো টাকা ব্যয় হয়নি।
শুনানিতে আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কোনো সেটেলার খালেদা জিয়া নন। তিনি কোনো দায়িত্বেও ছিলেন না। ট্রাস্টের সম্পত্তিতে তাঁর কোনো হস্তক্ষেপও নেই। রাজনৈতিক হয়রানির জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে নির্বাচন (২০১৮ সাল) থেকে বিরত রাখতে ওই রায় অস্ত্র (টুল) হিসেবে কাজ করেছে। যে অর্থের কথা বলা হয়েছে, তা ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত আছে। এই অর্থের কোনো তসরুপও হয়নি। হাইকোর্টের রায় অনুমান নির্ভর। ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে ধারণার ভিত্তিতে কাউকে সাজা দেওয়া যায় না।’
গত ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার লিভ-টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
যে মামলায় প্রথম কারাগারে খালেদা জিয়া
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। একই বছরে ২৮ মার্চ খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের করা আবেদনে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। পরে হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে লিভ-টু আপিল করেন খালেদা জিয়া।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন—মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।