আজ সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫ ||
২৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসটা অতীব জরুরি
শুক্রবার, ০৭ মার্চ, ২০২৫
ফাইল ছবি
তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি : নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসটা অতীব জরুরি। যদি আত্মবিশ্বাস আর নিজের উপর আস্থা নিয়ে কোন নারী সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় তাহলে কেউ তাকে দাবিয়ে রাখতে পারে না।
নারীর পিছিয়ে থাকার নেপথ্যের কারণ হিসেবে আমি তারমধ্যে আস্থা আর আত্মবিশ্বাসের অভাবকেই অন্যতম বলে মনে করি।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো বলেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
তিনি বলেন, নারীর একটা পজেটিভ বিষয় হলো- সে সামান্য সুযোগ পেলে তা আঁকড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। নারীর আত্মবিশ্বাস, নিজের ওপর আস্থা রাখা, কাজের ক্ষেত্রগুলো প্রস্তুত করে সমাজে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার পরিবার ও কর্মপরিবেশ উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, পরিবার বা কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সম্মান ও সহযোগিতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে নারীর এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবস সারাবিশ্বে তো বটেই আমাদের দেশের নারীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। একটা দেশের উন্নয়নের মানদণ্ড সেদেশে নারীর কী অবস্থা এবং নারী কী অবস্থানে রয়েছে তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে।
গত ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সে সময় থেকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কারণ এ গোষ্ঠী দেখছে, যে নারীরা যেভাবে এগিয়ে আসছে তাদেরকে দমাতে হবে। এসব বিষয় আমাদের কারোরই চোখ এড়ায়নি।
তিনি বলেন, ‘এখানে ধর্মীয় কথাটা না বলে আমি বলছি- একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী মেয়েদের পিছিয়ে দিতে ধর্মের অপব্যবহার করছে। এটা আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সম্প্রতি মেয়েদের ফুটবল খেলায় বাধা দিতে চেয়েছে। কিন্তু তা পারেনি। নারীদের পিছিয়ে দিতে নানাভাবে দমানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে আমি একদিকে নারী নির্যাতন হিসেবে দেখি, আবার অন্যদিকে এটাকে সন্ত্রাস হিসেবে দেখি। আইনিভাবে সেই হিসেবেই এটাকে দেখতে হবে এবং এক্ষেত্রে অপরাধীর সঙ্গে কোনো আপস নয়, দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, অধিকারের জায়গায় নারীকে নিজের উদ্যোগেই সচেতন হতে হবে। নারীকে তার প্রতিবন্ধকতার জায়গা সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
নিজের মন্ত্রণালয়ে কর্মরত নারীদের কাজ অত্যন্ত অদৃশ্যমান উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কাজ কিন্তু নারীরা করে থাকে। মাঠপর্যায়ে যেসব খাদ্য উৎপাদন হয় এবং শাকসবজি চাষ ও পশুপাখি এবং মৎস্য উৎপাদন হয় তার নেপথ্যে নারীর শ্রমের কথা অনুল্লেখ্য থেকে যায়। মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক অনেক নারী রয়েছে যারা নিরলসভাবে কাজ করছে, তাদের কাজের কেউ মূল্যায়ন করছে না। আমার এখন দায়িত্ব হচ্ছে এসব নারীদের স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করা এবং তাদের কর্মকাণ্ড সমাজের কাছে তুলে ধরা।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্থানীয়ভাবে নারী মৎস্যজীবীদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার নির্দেশ দিয়েছি। যেন পরিসংখানে এসব লড়াকু নারীদের অংশগ্রহণ দেখতে পাই। শুধু মুখে আর কাগজে কলমে নারীর উন্নয়নের কথা বললে হবে না। বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত নারীদের কাজের বিষয়টিকে তুলে আনতে হবে। অন্যদিকে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে তারা আরো কাজে মনোযোগী হবে।
তিনি বলেন, আমি আসলে বদ্ধ ঘরে বসে বক্তৃতার মধ্যে থাকতে চাই না। তাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। ৮ মার্চ নারীর জন্য এ দিবসটি নারীর অধিকার ও সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে একটি বিশেষ দিন রেখেছে জাতিসংঘ। সুতরাং, এ দিবসটাকে উদযাপন করা উচিত।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘নিজের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, নারী কোথাও-কোথাও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।’