আজ মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫ ||
৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন
দুই আন্দোলনের মধ্যে সরকারের উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছে
সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫
ফাইল ছবি
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: ফ্যাসিবাদ বিরোধী ও জুলাই আন্দোলনের মধ্যে সরকারের উপদেষ্টারা বিভাজনরেখা তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে এই অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, জুলাই-আগস্টের যে চূড়ান্ত আন্দোলন… এটা তো ১৫ বছরের বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন হয়েছে তার চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ। এই ১৫ বছরের মধ্যে ইলিয়াস নেই, চৌধুরী আলম নেই, সুমন নেই, … অদৃশ্য করা হয়েছে… এদেরকে কেনো করা হয়েছে। কারণ এরা সোচ্চার ছিল অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করা। এই কারণে ওরা জীবন দিয়েছে, সেই জীবনের একটা চূড়ান্ত বর্হিপ্রকাশ দেখলাম শিশু-তরুণ-কিশোররা জুলাই-আগস্টে তারা জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে।
রিজভী বলেন, আমি উপদেষ্টা সাহেবদেরকে বলব যে, আপনারা এই ১৫-১৬ বছরের আন্দোলন আর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করছেন কেন? এটা তো সব রক্তস্রোত একই সমুদ্রের মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়েছে এবং মোহনার এই মিলিত স্রোতেই শেখ হাসিনা আজকে পালিয়ে গেছে।
রিজভী বলেন, আপনাদেরকে (উপদেষ্টাগণ) বলব যে, আপনারা যে কদিন আছেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করুন। এখন তো মিনিকেট চালের কেজি ৮৫ টাকা… এদিকে আপনারা নজর দিন, পাইজাম আর ঝরনা চাল… একেবারে মোটা চাল সেটার দাম ৫৬/৫৭ টাকা… বিআর-২৮ সেটার দাম ৬২/৬৫ টাকা… এগুলোর দিকে নজর দিন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আপনি প্রধান উপদেষ্টা… মানুষের বিশ্বাস আপনার ওপর। আমরা চাই, আপনার হাত দিয়ে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হবে। আপনি যে কদিন ক্ষমতায় থাকবেন, আপনি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এই ধরনের গভীর বিশ্বাস জনগণের। কিন্তু যদি গড়িমসি হয় তাহলে তো ভিন্ন মাত্রা নেবে।
রিজভী বলেন, আপনার এক উপদেষ্টা ছাত্রদের বলছে তোমরা যেভাবে চালাচ্ছো আমাদেরকে… এভাবে পাঁচ বছর চললে পরে দেশ আরও সুন্দর হবে। তার মানে নির্বাচনের দরকার নাই। গণতন্ত্রের আরও যে নিশ্চয়তাগুলো আছে… আইনের শাসন, ন্যায়বিচার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা… এটা তো গণতন্ত্রের উপাদান। গণতন্ত্রের এসব উপাদানগুলো কী শেষ হয়ে যাবে? আমি সেই উপদেষ্টাকে বলতে চাই, এটার জন্যই তো লড়াই। কী সবক দিচ্ছেন? তাদেরকে তো ফ্যাসিবাদ অথবা ডিকটেটরশিপের দিকে আপনারা প্রলোভন দেখাচ্ছেন। এটা তো ঠিক নয়।
রেজভী বলেন, আজকে যে জনপদের পর জনপদে যে অসন্তোষ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেটা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের ফসল। এই দুঃশাসনের বিকৃত ফসলের মূল উৎপাটন করে আমাদের সমাজকে পবিত্র সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল একটি অগ্রগণ্য রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করবে এই প্রত্যাশা আমি করছি।
বাজারে চালের দাম অনেক বেশি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে এবার চালের বাজারের দিকে নজর দিতে বলবো।
শিশু আছিয়ার ধর্ষণসহ সকল অপরাধের বিচার দাবি করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, সরকারকে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে, মানুষের অধিকার আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের অপরাধের বিচার হতে হবে।
নয়াপল্টনে বিএনপির নারী সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে সারাদেশে ধর্ষণকারীদের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নয়াপল্টন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান।
সেলিমা রহমান বলেন, আপনারা দেখেছেন, নুসরাত পারুল থেকে শুরু করে গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে একের পর এক নারীরা ধর্ষিতা হয়েছে.. যারা ধর্ষণকারী তাদের কোনো বিচার হয়নি, এমনকি হত্যাকারী যারা তাদের কোনো বিচার হয়নি।
সেলিমা রহমান বলেন, কারণ যারা গুম-খুন-হত্যা করেছিল তারাই কিন্তু সেই সময়ে রক্ষক হিসেবে অন্যদেরকে দিয়ে কাজগুলো করাতো। আজকে আমরা এমন একজনের কাছে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি যাকে আমরা মনে করি শান্তির প্রতীক। আমরা জানি ড. ইউনূস তার কাছে আশা করছি আমাদের দেশ নিরাপদে থাকবে, আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে থাকবে, সবাই মুক্ত স্বাধীন কথা বলতে পারবে।
গত ৪ বছরে ৭ হাজার শিশুসহ ৪৩ হাজার নারী ধর্ষণে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর তুলে ধরে সেলিমা বলেন, এগুলোর কোনো বিচার হয় নাই। আমরা দেখেছি মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে যেন মনে হয় মহা উৎসব লেগেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ১১ জন মহিলা-শিশু ধর্ষিতা হয়েছে। এই ধর্ষিতা হওয়ার কারণটা কি?
মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, জেবা খানসহ মহিলা দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।