আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর বিগত দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই দুই মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত দুই হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট সাত হাজার ৮২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, পহেলা বৈশাখ সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যার ফলে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সাধারণ মানুষ আনন্দঘনভাবে নববর্ষ উদযাপন করতে সক্ষম হয়। দেশের চরাঞ্চলসহ ৬২টি জেলায় সেনাসদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, গণমাধ্যম ও সাধারণ জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করছে।
কর্নেল শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, গত দুই মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট দুই হাজার ৭৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে।
এই সেনা কর্মকর্তা আরও জানান, ঈদুল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সব জেলার বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। যা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড গত বছরের তুলনায় অনেকাংশে হ্রাস পায়। যা জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের কথা উল্লেখ করে এ সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, ভূমিকম্পের আঘাতে এ দুই দেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশের বিপদসংকুল সময়ে বাংলাদেশ সরকার জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সরকারের এ উদ্যোগে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেনাবাহিনীর কর্নেল শামিমের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল এবং ১০ জনের একটি মেডিক্যাল দল সেখানে পাঠানো হয়।
এসব কাজের পাশাপাশি সেনাবাহিনী দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ বিদেশি কূটনীতিক, ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করার দায়িত্বও সুষ্ঠুভাবে পালন করে যাচ্ছে বলে জানান কর্নেল শফিকুল ইসলাম।