আজ মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করেছে। একইদিনে আরও দুটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। নির্বাচন নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি, এখনও চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি। কিন্তু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কার ও নির্বাচনের প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে হবে। অতীতের ফ্যাসিবাদী শক্তি, অর্থাৎ ব্যক্তি ও দলের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় উক্ত বিষয়গুলো বরাবরের মতোই উপস্থাপন করেছিলাম। আমরা লক্ষ করেছি, উক্ত দিনই অর্থাৎ ২৪ মে (শনিবার) জাতীয় কিমিটির সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে, তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদকে দায়িত্ব পালনে অধ্যাবদি সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি ও দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয়, সন্দেহ উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবিদাওয়া ও এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।’
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরাজিত শক্তির ইন্ধনে ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত শক্তির ইন্ধন ও বেদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রদান জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।’
ড. মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারে পতন হয়েছে। আমরা অব্যশই ফ্যাসিবাদের বিচার চাই। ক্ষমতায় গেলে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে তাদের বিচার করা হবে। জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সব শ্রেণি-পেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায়, সেই জন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বাজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।’
কালবিলম্ব না করে ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ গ্রহণ ব্যবস্থা করা দাবি জানিয়ে বিএনপিনেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে, অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।’
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্রসম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠ্য করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই, আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫ এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া বর্তামান অন্তরবর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসাবে বিএনপির পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।’
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে সরকার ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্যরা।