আজ রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫ ||
৪ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ রবিবার, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন
দেশকে পুরোনো ব্যবস্থাপনায় নিতে চাইলে শহীদদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে : জামায়াত আমির
শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
ফাইল ছবি
তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি: যারা পচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার ফেরত নিতে চান; তাদেরকে আমরা বলি, জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছে আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন।
আপনারা পারবেন না।
আজ শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলটির জাতীয় সমাবেশে সভাপতির বক্তব্য একথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ।
জামায়াত আমির বলেন, ‘স্বৈরাচারের কঠিন অন্ধকার যুগের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে যারা তিলে তিলে দুনিয়া থেকে নির্যাতিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন, অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন, যারা লড়াই করে আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। যাদের ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে, আমরা তাদের সকলের কাছে গভীরভাবে ঋণী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অস্তিত্ব যতদিন থাকবে আল্লাহ যেন তাদের ঋণ পরিশোধ করার শক্তিটাও ততদিন আমাদেরকে দান করেন।
‘খুলনার এক উপজেলা আমির মাওলানা আবু সাঈদ, পাবনার বয়োঃজ্যেষ্ঠ একজন মুরব্বী মুস্তাফিজুর রহমান, সমাবেশে অসুস্থ হয়ে শাহ আলম, মহান আল্লাহ মৃত্যুবরণকারীদের জান্নাত নসিব করুন,’ বলেন তিনি।
জামায়াত আমির বলেন, ‘এতগুলো মানুষ এমনি এমনি জীবন দেয় নাই। জীবন দিয়েছে জাতির মুক্তির জন্যে। যদি পুরোনো সবকিছুই টিকে থাকবে তাহলে কেন তারা জীবন দিয়েছিল? যারা ওই পচা ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশকে আবার ফিরিয়ে নিতে নিতে চান, তাদেরকে আমরা বলি, জুলাই যুদ্ধ করে যারা জীবন দিয়েছেন আগে তাদের জীবনটা ফেরত এনে দেন। যদি শক্তি থাকে ফেরত এনে দেন। আপনারা পারবেন না। যেহেতু পারবেন না, কাজেই নতুন ব্যবস্থায় নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘শহীদ আবু সাঈদরা যদি বুক পেতে না দাঁড়াতো, এ জাতির মুক্তির জন্য যদি বুকে গুলি লুফে না নিত; হয়তোবা আজকের এই বাংলাদেশটা আমরা দেখতাম না। ইতোমধ্যে হয়তো আরো অনেক মানুষের জীবন ফ্যাসিবাদীদের হাতে চলে যেত। চব্বিশে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধটা যদি না হতো তাহলে আজকে যারা বিভিন্ন ধরনের কথা এবং দাবি-দাওয়া পেশ করছেন, তারা তখন কোথায় থাকতেন?
জামায়াত আমির বলেন, ‘যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালার এই নেয়ামত পাওয়া, তাদেরকে যেন অবজ্ঞা-অবহেলা না করি। অন্য দলকে যেন তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করি। অরাজনৈতিক ভাষায় আমরা যেন কথা না বলি। যদি এগুলো আমরা পরিহার করতে না পারি তাহলে বুঝতে হবে ফ্যাসিবাদের রোগ আমাদের মধ্যে নতুন করে বাসা বেঁধেছে। রাজনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করে জাতীয় জাতীয় ঐক্যের বীজতলাটা আমরা সবাই মিলে একসাথে তৈরি করবো ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশটা কেমন হবে? আমি বলি আরেকটা লড়াই হবে ইনশাল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইনশাআল্লাহ। এই দুর্নীতির মূলোৎপাটন করার জন্য যা দরকার, আমরা তারুণ্য এবং যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়েও যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ।
এ সময় জামায়াতের আমির অসুস্থ হয়ে মঞ্চে পড়ে যান।
একটু সুস্থ হলে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘সবাইকে নিয়ে আমরা কথা দিচ্ছি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী যদি আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানী ও জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সরকার গঠন করে, বাংলাদেশে মানুষের যদি জামায়াতে ইসলামী সেবা করার সুযোগ পায়— তাহলে মালিক হবে না, সেবক হবে ইনশাআল্লাহ। নির্বাচিত হয়ে কোনো এমপি-মন্ত্রী সরকারি প্লট-ফ্ল্যাট গ্রহণ করবে না, ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়িতে চড়বে না।
জামায়াত আমির বলেন, ‘আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করবো ইনশাআল্লাহ। এ লড়াই বন্ধ হবে না। বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জন হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। আজীবন সকলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছি, জেল-জুলুমের পরোয়া করি নাই। আমার আফসোস ২৪ সালে জাতিকে মুক্তি দিতে গিয়ে যারা জীবন দিয়ে শহীদ হলো, আমি তাদের একজন হতে পারলাম না। আপনাদের কাছে দোয়া চাই, ইনসাফের ভিত্তিতে একটি দেশ গড়ে তোলার জন্যে আগামীতে যে লড়াই হবে। আমার আল্লাহ যেন সেই লড়াইয়ে আমাকে একজন শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় শহীদ নেতৃবৃন্দ, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে, শাপলা গণহত্যা, সারাদেশের গণহত্যা, ২৪-এর গণহত্যা যারা করেছে তাদের সকলের বিচার বাংলাদেশের মাটিতে নিশ্চিত করতে হবে। এদের বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া শুরু না করা পর্যন্ত পুরোনো ব্যবস্থাপত্রে বাংলাদেশ আর চলবে না।
জামায়াত আমিরের ঘোষণা
জামায়াত আমির প্রতিশ্রুতি দেন যে, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি আগামীতে সরকার গঠন করে তাহলে কোনো এমপি ও মন্ত্রী আগামীতে সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না। কোনো এমপি বা মন্ত্রী ট্যাক্সবিহীন কোনো গাড়ি চড়বে না। তারা নিজেদের হাতে কোনো টাকা চালাচালি করবে না। কোনো এমপি বা মন্ত্রী যদি তার নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকেন কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে তারা তার প্রতিবেদন তুলে ধরতে বাধ্য হবেন। চাঁদা আমরা নিব না, দুর্নীতি আমরা করবো না। চাঁদা আমরা নিতে দেব না, দুর্নীতি আমরা সহ্য করবো না।