সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫
আহসান হাবিব, নিজস্ব প্রতিনিধি: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্তৃক প্রণীত এই সংশোধনীতে নির্বাচনী আচরণবিধি, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থা
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদের ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করবে।
নির্বাচন কর্মকর্তাদের জন্য শাস্তি সুনির্দিষ্ট
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য কর্মকর্তাদের শাস্তি সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
ইভিএম বাতিল
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কিত সব বিধান বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে ভোট গ্রহণে ঐতিহ্যগত পদ্ধতির উপর নির্ভরতা বাড়তে পারে।
‘না ভোট’ এর বিধান
ভোটারদের জন্য ‘না ভোট’ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এমনকি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও ভোটাররা ‘না ভোট’ এর পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন।
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য
হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে ভোট বাতিল হবে। আর নির্বাচনের পর প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে।
ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার
সংবাদকর্মীদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ এবং ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে, তাদের পুরো গণনা প্রক্রিয়ার সময় উপস্থিত থাকতে হবে। এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।
ইসির বর্ধিত ক্ষমতা
নির্বাচন কমিশন পরিস্থিতি বিবেচনায় এক বা একাধিক ফলাফল বা পুরো নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা পেয়েছে। এটি নির্বাচনী অনিয়ম রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি
নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রার্থী ও দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখবে।
ভোট সমান হলে পুনরায় ভোট
ভোটের ফলাফল সমান হলে লটারির পরিবর্তে পুনরায় ভোটগ্রহণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
আলোকসজ্জায় নিষেধাজ্ঞা
নির্বাচনী প্রচারে ডিজিটাল বিলবোর্ড ছাড়া অন্য কোনো আলোকসজ্জা ব্যবহার করা যাবে না।
প্রশাসনিক বদলিতে পরিবর্তন
পুলিশ ও প্রশাসনের বদলির ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ডিআইজিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এআই ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এটি নির্বাচনী প্রচারে বিভ্রান্তি রোধে কার্যকর হবে।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন
কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের আবেদন নাকচ হলে ইসি ১৫ দিনের মধ্যে কারণসহ চিঠি পাঠাবে।
কোনো দলের কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ হলে করণীয় স্পষ্ট করে বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধনের জন্য ১৪৩টি আবেদন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৮৪টি দল ঘাটতি পূরণ করে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ২২টি দলের আবেদন প্রাথমিকভাবে সঠিক পাওয়া গেছে, যাদের মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করা হবে। বাকি আবেদনগুলো অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে।
জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজস্ব প্রতীক
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব প্রতীকে ভোট করতে হবে।
নারীর প্রতি সম্মান
নির্বাচনী আচরণবিধিতে নারীর প্রতি সম্মান নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি নির্বাচনী প্রচারে লিঙ্গ সমতা ও শ্রদ্ধার সংস্কৃতি প্রচার করবে।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এই সংশোধনীগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং জবাবদিহিমূলক করার লক্ষে গৃহীত। বিশেষ করে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার, আচরণবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি এবং এআই-এর অপব্যবহার রোধের বিধান নির্বাচনী সংস্কারে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
এর আগে সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরপিও সংস্কারের একগুচ্ছ সুপারিশ চূড়ান্ত করতে মুলতবি করা নবম কমিশন সভায় পুনরায় বৈঠকে বসে।