নির্লিপ্ত সুশীলরা এখনো নির্লিপ্ত, দলকানারা নিজের দলের সাফাই গেয়েই চলেছেন, ছাগুরা আন্দোলনের আগুনে আলু পোড়াতে ব্যস্ত, সাধারণ মানুষ জানে না তারা কোনদিকে যাবে।
সতীর্থদের অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদে স্কুল-কলেজের বাচ্চারা পথে নেমে এসেছে, চালকদের লাইসেন্স চেক করছে, লাইসেন্স/রেজিস্ট্রেশনবিহীন গাড়িতে বড় বড় করে ‘লাইসেন্স নাই’ অথবা ‘চোরাই গাড়ি’ লিখে দিচ্ছে। পুলিশ, আমলা, রাজনীতিবিদ, হোমরা-চোমড়া কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। ট্রাফিকের গতি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা, সুন্দর করে সারি বেঁধে চলছে রিকশা, বেবিট্যাক্সি, প্রাইভেটকার। পুলিশের লাঠিচার্জের মুখেও পিছিয়ে পড়ছে না বাচ্চারা। গর্বে আমাদের বুক ফুলে উঠেছে, আমরা স্বপ্ন দেখছি-এই শিশুরাই বড় হয়ে আমাদের একটা সুন্দর দেশ উপহার দেবে।
ঠিক তখনোই আন্দোলনটা হাইজ্যাক হয়ে গেল ইউনিফর্ম পরিহিত নকল ছাত্রদের দ্বারা। বাচ্চারা একদিকে মার খাচ্ছে পুলিশের হাতে, একদিকে ইউনিফর্মের আড়ালে লুকানো ছাগুদের হাতে, অন্যদিকে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগের গুন্ডাদের হাতে। তারপরই শুরু হলো ধরপাকড়। না গুন্ডাদের নয়, ধরপাকড় শুরু হলো গুজব ছড়ানোর অপরাধে লেখক এবং মুক্তমনাদের। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রাস্তা ঘাটে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের যাকে পাচ্ছে তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। শুধু ছাত্ররা নয় এর শিকার হচ্ছে ছাত্রীরাও। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাউকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না কেন? এটা মোটেও ঠিক নয়। এতেই প্রমানিত হয় দেশে আইনের শাসনের অভাব আছে। দেশে আইনের শাসন থাকলে এমটা হতো না। যারা নিরপরাধ তাদের অভিলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিৎ।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে কত পার্সেন্ট কোটা সংস্কার করা হবে, এটা পরিস্কারভাবে উল্লেখ থাকাটা জরুরি ছিল, কিন্তু তা উল্লেখ ছিল না। ছাত্র-ছাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ করতে পারে, তার সাক্ষাৎ প্রার্থনা করতে পারে। এবং যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের মুক্তি দাবি করতে পারে এবং সরকার তাদেরকে মুক্তি দিয়ে দিতে পারে। তাদের মুক্তি না দিয়ে সরকার যত কালক্ষেপণ করবে, সমস্যা আরো জাটিলও হতে পারে।
এখন চলছে এক ধরনের হতাশা, যন্ত্রণা আর ক্ষোভ। যে আওয়ামীলীগ আমার ভালোবাসা, যে আওয়ামীলীগ ছিলো আমার দল, সেই দলটিকে আমি সিম্পলী হারিয়ে ফেলেছি।
এই দলটির ক্রমাগত অন্যায়, লুটপাট, ব্যাক্তির বাক স্বাধীনতাতে অন্যায় হস্তক্ষেপ, ইনটলারেন্স এগুলো সব কিছু আমার কাছে রিজেনেবল মনে হয়নি এবং এই দলটির ক্রমাগত স্ব-বিরোধী বক্তব্য আমাকে আঘাতে জর্জরিত করেছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক আচরণ, একে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া, তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া, খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া, নির্যাতন এগুলো সীমা ছাড়িয়ে গেছে অন্য যে কোনো সময়ের থেকেও।
এসব ঘটনার পর পর সেটি যেমন করে ডিনাই বা প্রত্যাখ্যান করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে, ঠিক একইভাবে সরকার সমর্থকদের কাছ থেকেও এটি প্রত্যাখ্যান করা হয়। সরকারের সমর্থকেরা এমন একটি ভান করেন যেন এই দেশে কিছুই হচ্ছেনা, চারদিকে উন্নতির নহর বয়ে চলছে।
কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন সমর্থক হবার পরেও আমি এইসব অন্যায়ের সাথে কোনোভাবেই আপোষ করতে পারিনি। আমি কখনোই আশা করিনা বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান আদলের দেশ হবে কিন্তু আমি একটা মানবিক রাষ্ট্র চাইতেই পারি?
লেখক: ফায়জুল কবির, প্রবাসি সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।