অবাধ-সুষ্ঠু নয়, ইইউ বিশ্বাসযোগ্য স্বচ্ছ নির্বাচন চায় : টেরিংক
শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮
শাহীনুর আক্তার, ষ্টাফ রিপোটার: অবাধ-সুষ্ঠু নয়, আগামীতে বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কারণ ইইউ নীতিগতভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ‘অবাধ-সুষ্ঠু’ শব্দগুলোকে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য মনে করে না।
এসব শব্দের প্রয়োগ হলেও অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখা গেছে। এ কারণে ইইউ বিশ্বজুড়েই বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে এবং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এটাই প্রত্যাশা করে।
সম্প্রতি নতুন রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ আগামী নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক করতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করে ইইউ। ঢাকায় ইইউ মিশন কার্যালয়ে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেনজি টেরিংক। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে এরই মধ্যে ইইউ তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বস্ত করেছেন, উদ্বেগ আমলে নিয়ে এ আইন সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অবস্থা, রোহিঙ্গা সংকট এবং বাংলাদেশ-ইইউ চলমান সহযোগিতা-সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন রেনজি টেরিংক।
বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ যেসব দেশের উন্নয়ন সহযোগী, সেসব দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি কিংবা অন্য যে কোনো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখে। ইইউ বাংলাদেশেরও সক্রিয় উন্নয়ন সহযোগী। সে কারণেই ইইউ তার নিজস্ব রীতি অনুযায়ীই বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপরও নজর রাখে। বর্তমানে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দু’জন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। তবে তাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, ইইউ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে গতানুগতিকভাবে ব্যবহূত ‘অবাধ-সুষ্ঠু’ শব্দগুলোকে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য মনে করে না। ইইউ ‘বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ’ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করে। আগামী জাতীয় নির্বাচন ‘বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ’ হবে বলে প্রত্যাশা করে ইইউ। রেনজি টেরিংক বলেন, সম্প্রতি নির্বাচনকে ঘিরে নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ হতে দেখা গেছে। এই আত্মপ্রকাশকে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ইইউ। কারণ এই নতুন রাজনৈতিক জোট বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং অংশগ্রহণমূলক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, সন্দেহ নেই। অংশগ্রহণমূলক হলে নির্বচনের বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়ে। ইইউ আশা করে, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং সব দলের সমান অধিকার নিশ্চিত করবে।
রাজনৈতিক জোটগুলোকে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০১৪ সালে ইইউ পার্লামেন্টে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। ইইউ নীতিগতভাবে বিশ্বাস করে, যে কোনো রাজনৈতিক জোট গঠনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার এবং সংবিধানে বর্ণিত জনগণের মৌলিক অধিকার এবং সময়ের প্রয়োজনে সঠিক অগ্রযাত্রার বিষয়গুলো নিশ্চিত করার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। এই নীতি অনুসরণ করলে রাজনৈতিক জোট গঠনেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ সব সময় তিন স্তরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাই হবে। আগামী নভেম্বরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউর বিশেষজ্ঞ দলের বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। এই দলটি নির্বাচন-পূর্ব পরিস্থিতি, নির্বাচনের দিন ভোট গ্রহণের চিত্র এবং নির্বাচন-পরবর্তী অবস্থা- এই তিন স্তরে নির্বাচনী প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। দলটি আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে উদ্বেগের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটতে পারে এমন জোরালো আশঙ্কার যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। এ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সময় থেকেই এ ব্যাপারে তার অবস্থান তুলে ধরেছে ইইউ। এ আইনটি পাসের পরও উদ্বেগের কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজের দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই এ সংকটের প্রকৃত সমাধান সম্ভব। কিন্তু এই প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নির্ভর করছে মিয়ানমারের সদিচ্ছার ওপর। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের জরুরি মানবিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে ভূমিকা রেখেছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করে ইইউ। সংকটের শুরু থেকেই এ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে ইইউ।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গে রেনজি টেরিংক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সহায়তা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ইইউ। তিনি আরও বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশের লক্ষণীয় উন্নতি হয়েছে। এর ফলে ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার আগের চেয়ে বেশি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত হবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।