বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: আদালত, বুলেট আর কথার যুদ্ধে জমজমাট এবারের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। সব মিলিয়ে এবারের নির্বাচনের প্রচারণার ধরন ছিল জাতির জীবনে অনন্য সাধারণ ঘটনা।
অপরাধী ট্রাম্প
‘ট্রাম্প দোষী’ এই শিরোনামে প্রথম পাতায় গত ৩০ মে বিশ্বের প্রায় সব দেশের গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়। ফৌজদারী অপরাধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন রিপাবলিকান এই প্রার্থী। তার বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ের ক্ষণে ট্রাম্প পর্ন স্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মুখ বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন এমন অভিযোগও আসে। তাদের যৌন সম্পর্কের কথা যেন গণমাধ্যমে প্রকাশ না হয় সেজন্য এই কাজ করেছিলেন ট্রাম্প।
পরে আদালতে ছয় সপ্তাহের বিচারে ড্যানিয়েলস তাদের এক রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন। উঠে আসে ট্রাম্পের রেশম পাজামার গল্প।
এসব ঘটনা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নির্বাচনি প্রচারণার ধারা থেকে কিছুটা হলেও বিচ্যুত করে। তবে গণমাধ্যমের স্পটলাইট তার ওপরই ছিল সবসময়, এমনকি তার অপরাধপ্রবণ কাজকর্মের পরও।
দোষী সাব্যস্ত করে দেওয়া বিচারের রায়ের পরেও কোনো মার্কিন আইনই পারেনি তাকে নির্বাচনের দৌড় থেকে সরিয়ে দিতে। বরং, রিপাবলিকান এই প্রার্থীর প্রতি সমর্থনের পাল্লা আরও ভারী হয়। এমনকি, আরও তিনটি ফৌজদারী মামলা থাকার পরেও।
বিতর্কের নাটক
জুন মাসের ২৭ তারিখে প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে সে সময়কার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন তার রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রম্পের বিরুদ্ধে বিপর্যয়কর ফলাফলের মাধ্যমে ভীষণভাবে সমালোচিত হন। বিতর্কে ৮১ বছর বয়সী বাইডেন বেশ কয়েকবার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে কথা হাতরে বেড়ান এবং তিনি কী নিয়ে কথা বলছিলেন সে প্রসঙ্গটিও ভুলে যান। এর ফলে ডেমোক্র্যাট শিবিরে প্রশ্নের দেখা দেয়, তিনি আদৌ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য শতভাগ উপযুক্ত কিনা।
বাইডেন এই ঘটনাকে ‘একটি খারাপ রাতের ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করলেও দলের তহবিল প্রদানকারীরা তাদের চাঁদা প্রদানে অনিচ্ছার কথা তুলে ধরেন বিভিন্নভাবে। এমনকি বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে না দাঁড়ালে চাঁদা বন্ধেরও হুমকি দেন কেউ কেউ।
এই প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের পর বাইডেন তার প্রতিদ্বন্দ্বি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাইতে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েন, যা বিভিন্ন জরিপে উঠে আসে।
আততায়ীর হামলা
নির্বাচনি প্রচারণা চলার সময় সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে ১৩ জুলাই। এদিন পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনি জনসভায় হামলার শিকার হন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জনসভায় ট্রাম্প বক্তৃতা দেওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়, একটি গুলি ট্রাম্পের একটি কান স্পর্শ করে যায়। বাকি ঘটনার সাক্ষী হন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য মানুষ। ট্রাম্পের কান রক্তাক্ত হয়ে যায়, মঞ্চে তাকে ঘিরে ধরেন নিরাপত্তাকর্মীরা। চিৎকার-চেঁচামেচির মধ্য দিয়েই সিক্রেট সার্ভিস সদস্যরা তাকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেন।
বন্দুকধারী ২০ বছর বয়সী থমাস ম্যাথু ক্রুক নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ডান কানে সামান্য আঘাত নিয়ে বেঁচে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নিরাপত্তকর্মীরা যখন তাকে সরিয়ে নিচ্ছিলেন তখন মুষ্ঠিবদ্ধ হাত তুলে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মনোভাবের কারণে তার আলাদা উমেজ গড়ে ওঠে।
পরে আরেক সামবেশে রিপাবলিকান এই প্রার্থী বলেন, ‘আমি গণতন্ত্রের জন্য বুলেটবিদ্ধ হয়েছি।’
বাইডেনের বিদায়
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে কিছুটা শঙ্কার মধ্যেই ২১ জুলাই দুপুর পৌনে ২টায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন টুইটারে এক বার্তার মাধ্যমে ঘোষণা দেন, তিনি পুনর্নির্বাচনের লড়াই থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। আর এই ঘোষণার মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের লড়াই ভিন্ন মাত্রা পায়।
জো বাইডেন এক ঘোষণায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এশিয়ান-আমেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট পদে লাইয়ের জন্য মনোনীত করেন।
এর দু সপ্তাহের মধ্যেই কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন পান আনুষ্ঠানিকভাবে। মনোনীত হয়েই ডেমোক্র্যাটদের প্রচারণায় শক্তির সঞ্চার করেন কমলা। মতামত জরিপে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারক দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে ধীরে ধীরে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে যেতে থাকেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে আবারও ভয়
ফ্লোরিডায় ১৫ সেপ্টেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলফ কোর্স আবারও গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে। আর এবার গুলির শব্দ আসে সিক্রেট সার্ভিস সদস্যের বন্দুক থেকে। এফবিআইয়ের ভাষায় আততায়ীর হামরা ঠেকাতেই এই গুলি করা হয়। তবে এতে ট্রাম্পের কোনো ক্ষতি হয়নি, তিনি অক্ষত থাকেন। দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো এমন ঘটনা তৈরি হয় ট্রাম্পকে নিয়ে।
তদন্তকারীরা জানান, বন্দুকধারী রায়ান রুথ ট্রাম্পের দিকে কোনো গুলি ছোড়েননি। তবে তার কাছে বন্দুক ছিল আর তা এক সারি গাছের দিকে তাক করা ছিল। নিরাপত্তাকর্মীদের গুলির শব্দে তিনি পালানোর চেষ্টাও করেন।
ডেমোক্র্যাট শিবির এই রাজনৈতিক সংঘাতের নিন্দা জানায়। তবে ট্রাম্পের ওপর হামলাকে বাইডেন ও কমলা হ্যারিস উত্তেজনা তৈরির ‘বাগাড়ম্বর’ হিসেবে অভিহিত করেন।