খবর বিবিসির।
সম্প্রতি ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল কর ও ব্যয় বিল’ নিয়ে প্রকাশ্য সমালোচনার জেরে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের সঙ্গে ফেডারেল চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন। অথচ নাসা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) নভোচারী ও সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য স্পেসএক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এমনকি চাঁদে ও মঙ্গল গ্রহে নভোচারী পাঠানোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও স্পেসএক্সের স্টারশিপ রকেটের ওপর নির্ভরশীল।
প্রকাশিত বাজেট অনুরোধে নাসার বিজ্ঞান প্রকল্পগুলোর তহবিল প্রায় অর্ধেক কমিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে উন্নয়নাধীন বা মহাকাশে থাকা ৪০টি বিজ্ঞান মিশন বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। ওপেন ইউনিভার্সিটির মহাকাশ বিজ্ঞানী ড. সিমিওন বার্বার এই পরিস্থিতিকে মানব মহাকাশ কর্মসূচিতে ‘নীরব প্রভাব’ ফেলছে বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহের আকস্মিক সিদ্ধান্তগুলো আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার মূল ভিত্তিকেই দুর্বল করে দিচ্ছে।’
ট্রাম্প প্রশাসন নাসাকে দুটি মূল লক্ষ্যের দিকে মনোনিবেশ করাতে চাচ্ছে। একদিকে চায়নার আগে চাঁদে নভোচারী পাঠানো এবং মঙ্গল গ্রহে মার্কিন পতাকা স্থাপন করা। অন্যদিকে বাকিসব গবেষণাকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা দেখা।
হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, নাসার সামগ্রিক বাজেট প্রায় এক চতুর্থাংশ কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে। এতে মঙ্গল গ্রহে নভোচারী পাঠানোর প্রচেষ্টায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বৃদ্ধি পেলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর কথা বলা হয়েছে।
নাসার দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেট বাতিল করে স্পেসএক্সের স্টারশিপ বা জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের নিউ গ্লেন রকেটের ওপর নির্ভর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও এসএলএস নির্মাণ ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল। এছাড়া স্টারশিপের সাম্প্রতিক একাধিক পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে নিউ গ্লেন এখনও প্রাথমিক পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
ড. বার্বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ‘নাসা হয়তো কড়াই থেকে আগুনের দিকে ঝাঁপ দিচ্ছে।’ তিনি আরও সতর্ক করেন, যদি বেসরকারি কোম্পানিগুলো তাদের সিস্টেম উন্নয়নে আরও অর্থের দাবি করে, তবে কংগ্রেসকে তা দিতে বাধ্য হতে পারে।
সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো- অন্যান্য গ্রহ অন্বেষণ ও মহাকাশ থেকে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পর্যবেক্ষণের জন্য নির্ধারিত ৪০টি মিশনের সম্ভাব্য ক্ষতি। এর মধ্যে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (ইএমএ) সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রকল্পও অন্তর্ভুক্ত, যেমন মঙ্গল গ্রহ থেকে নমুনা ফিরিয়ে আনা এবং ইউরোপের রোভার পাঠানো। এই কাটছাঁটগুলো বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে।
যদিও এই বাজেট প্রস্তাবগুলো এখনও কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে একবার বন্ধ হয়ে যাওয়া মহাকাশ মিশনগুলো পুনরায় চালু করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে, যা নাসার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলোকে সংকটের মুখে ফেলবে।