আমাদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না।
আজ শুক্রবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা ৭টা ৫১ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা বলেন তাসনিম জারা।
‘বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আজকের বিএনপি তার বিরোধিতা করছে’ উল্লেখ করে তাসনিম জারা ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ঈদের আগে ঐকমত্য কমিশনে যখন সংরক্ষিত আসনে নারীদের সরাসরি নির্বাচনের কথা বলি। বিএনপির প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমেদ উত্তর দেন, তাসনিম জারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা সামাজিক বাস্তবতা, রাজনৈতিক বাস্তবতা, নারীদের অগ্রগতি বিবেচনায় নিয়ে তারা সমর্থন করছেন না। উনি বলেছেন, সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হোক এবং এখন যেভাবে পার্টির প্রধানরা ঠিক করেন কে হবেন সংরক্ষিত নারী এমপি, সেটাই যেন বহাল থাকে। পরবর্তীতে যদি নারীদের যথেষ্ট অগ্রগতি হয়, তখন সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা বিবেচনা করা যেতে পারে। ’
ফেসবুকে তাসনিম জারা আরও লেখেন, “বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনি ইশতেহারকে নাম দিয়েছিল নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি। ইশতেহারকে প্রতিশ্রুতি বলার একটা গুরুত্ববহ দিক আছে। আমাদের সংস্কৃতিতে ‘প্রতিশ্রুতি’ শব্দটার প্রতি একটি বিশেষ মর্যাদা আছে। আমরা যখন কোন কিছু করব বলে আন্তরিকভাবে বোঝাতে চাই, তখন প্রতিশ্রুতি দেই। হয়তো বিএনপি বোঝাতে চেয়েছিল যে, এই কথা তারা রাখবেই। যাই হোক, সেই ইশতেহারের ৩.১৩ ধারায় বেগম খালেদা জিয়া দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন—“সংসদে নারীদের আরো কার্যকরী ভূমিকা পালন ও ক্ষমতায়নের জন্য তাদের আসনসংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে এবং মহিলা আসনে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।”
“এটি কেন প্রয়োজন, সেটাও বেগম খালেদা জিয়া ব্যাখ্যা করেছিলেন এই বলে যে, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। কিন্তু যুগ যুগ ধরে তারা তুলনামূলকভাবে পশ্চাদপদ রয়ে গেছেন। জনসংখ্যার অর্ধেক অংশকে শিক্ষাহীন, আত্মবিশ্বাসহীন ও পরনির্ভরশীল রেখে কোনো জাতি সার্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। নারী সমাজকে তাদের যথার্থ সামাজিক অবস্থান ও মহৎ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া উচিত নয়।’এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে মানুষ বিএনপিকে ভোট দিয়েছিল, কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ আজকের আলোচনার বিষয় নয়। হয়তো বিএনপি ভবিষ্যতে ব্যাখ্যা করবে কেন তা করতে পারেনি। ২০০১ সালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এই অবস্থা চলতে দেওয়া উচিত নয়। আর আজ ২০২৫ সালে, জুলাই আন্দোলনের পর ঐতিহাসিক এই সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপির প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমেদ বলছেন, সময় এখনও হয়নি”, যোগ করেন এনসিপির এই নেত্রী।
ফেসবুক পোস্টে তাসনিম জারা লেখেন, ‘হয়তো আরও ১০ বছর পরে নারীদের নির্বাচন করার উপযোগী অবস্থা তৈরি হবে। কিন্তু তিনি বলেননি, কী দেখে আমরা বুঝবো সেই অবস্থা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেননি, বিএনপি কী করবে নারী সমাজকে ইলেকশনের জন্য প্রস্তুত করতে। তিনি বলেননি কেন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিশ্রুতি সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ ছিল না। শুধু বলছেন, নারীদের সরাসরি নির্বাচন সম্ভব না। সেই কাঠামোই বহাল থাক, যেখানে কে হবেন নারী সাংসদ, তা ঠিক করবেন দলের প্রধান। জনগণ নয়। এই নারী সাংসদদের কোনো এলাকা থাকবে না। কোনো ভোটার থাকবে না। জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে না। জবাবদিহি থাকবে কেবল দলের কাছে।’
‘এখন আমরা কী করতে পারি’ এমন প্রশ্ন উল্লেখ করে তাসনিম জারা লেখেন, ‘নারীদের সরাসরি নির্বাচনের সুযোগ এখন সৃষ্টি করতে না পারলে আমরা আরও কয়েক দশক পিছিয়ে যাবো। তাই এখন আমাদের আওয়াজ তুলতে হবে। আমাদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষান্ত হবো না।’
তাসনিম জারা আরও লেখেন, ‘আমরা একটি ইভেন্ট খুলেছি। সেখান থেকে আমরা কিছু কাজ হাতে নিচ্ছি। যেমন জনগণের স্বাক্ষর ও খোলা চিঠি। সেখানে যোগ দিন। আপনার অন্য কোনো আইডিয়া থাকলে সেটা ইভেন্টে লিখুন বা আমাকে মেসেজ পাঠান। https://www.facebook.com/share/19ZDWP7JZb/। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিছু কার্যক্রম হাতে নেবো। আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট হন আর এই ক্যাম্পেইনে সাহায্য করতে চান, তাহলে আমাকে মেসেজ করুন।’