শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের তীব্রতার মধ্যেই আজ বুধবার (১৮ জুন) টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ভাষণে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ইরান চাপের মুখে কারও কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।
মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান!
ইরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সহায়তা চায় ইসরায়েল। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়ে যুদ্ধে অংশ নিলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে পাল্টা হামলা চালানোর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে ইরান। গোয়েন্দা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে প্রায় তিন ডজন জ্বালানি রিফুয়েলিং বিমান ইউরোপে পাঠিয়েছে। এগুলো আমেরিকান ঘাঁটি রক্ষা করতে বা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্ভাব্য হামলায় বোমারু বিমানের পাল্লা বাড়াতে ব্যবহার করা হতে পারে।
যুদ্ধের বিস্তৃতি নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতে হস্তক্ষেপের জন্য হোয়াইট হাউসের উপর চাপ বাড়িয়েছে ইসরায়েল। ফলে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেয় এবং ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ফোরদোতে হামলা চালায়, তবে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা প্রায় নিশ্চিতভাবে লোহিত সাগরের জাহাজে হামলা পুনরায় শুরু করবে। তারা আরও বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানপন্থি মিলিশিয়ারা মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করবে।
অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলার ঘটনা ঘটলে ইরান হরমুজ প্রণালীতে মাইন স্থাপন শুরু করতে পারে, যা পারস্য উপসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ আটকে রাখার একটি কৌশল। কমান্ডাররা সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও সৌদি আরবসহ সমগ্র অঞ্চলের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে মার্কিন সেনাদের উচ্চ সতর্কতায় রেখেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বর্তমানে ৪০ হাজারেরও বেশি মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
ইরানের পাল্টা হামলার হুমকি
দুজন ইরানি কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলের যুদ্ধে যোগ দেয়, তবে ইরাক থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে ইরান। তারা আরও বলেছেন, যেসব আরব দেশে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে তারা হামলায় অংশ নেবে, সেগুলোকে ইরান লক্ষ্যবস্তু করবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের শত্রুদের জানা উচিত যে, তারা আমাদের ওপর সামরিক হামলা চালিয়ে কোনো সমাধান অর্জন করতে পারবে না এবং ইরানি জনগণের ওপর তাদের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দিতে পারবে না।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আরাগচি তার ইউরোপীয় সমকক্ষদের সঙ্গে ফোনালাপে বলেছেন যে, যদি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, তবে এর দায় ইসরায়েল ও এর প্রধান সমর্থকদের ওপর বর্তাবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানোর জন্য ইরানের খুব বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন হবে না। ইরানের সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিগুলো থেকে হামলা চালাতে বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে থাকা মার্কিন লক্ষ্যবস্তুগুলো সহজ নাগালের মধ্যেই রয়েছে।
ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া
ইরানের সঙ্গে গত ছয়দিন ধরে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া। দেশটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সামরিক সহায়তা পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করতে পারে। আজ বুধবার (১৮ জুন) রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ এ তথ্য জানান।
রিয়াবকভের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স জানায়, ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা, সরঞ্জাম সরবরাহ করা বা সে বিষয়গুলো বিবেচনা করা থেকেও বিরত থাকতে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে মস্কো। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
এদিকে আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, উভয় নেতা এই সংকট নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন এবং একটি দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
কথোপকথন চলাকালে, পুতিন এই সংকট নিরসনে রাশিয়ার মধ্যস্থতা করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন। তাস আরও জানায়, তিনি অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে তার কথোপকথন সম্পর্কে আমিরাতের প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেন। এই পদক্ষেপগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে রাশিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা ও সমাধানের প্রচেষ্টার ইঙ্গিত দেয়।