ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯৬ রান তোলে। জবাবে ৩০.১ ওভারে ১১৭ রানে অলআউট হয় উইন্ডিজরা।
বাংলাদেশের ব্যাটাররা যে রান করেছেন, এই পিচে সেটি পাহাড়সম। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষায় বসতে হবে, সেটি বোঝা গিয়েছে। বাংলাদেশি স্পিনার নাসুম আহমেদ সেটি আরও কঠিনতর করে তুললেন। ক্যারিবীয় টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে তুলে স্বাগতিকদের এনে দিয়েছেন দারুণ শুরু।
পঞ্চম ওভারে প্রথম আঘাত হানেন নাসুম। ক্যারিবীয় ওপেনার অ্যালিক আথানেজকে লেগবিফোর করেন তিনি। ২১ বলে ১৫ আসে আথানেজের ব্যাট থেকে। ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা। আরেক ওপেনার ব্র্যান্ডন কিংকে বোল্ড করেন ২৮ রানে। কিংয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ১৮ রান। আকিম অগাস্টেকে রানের খাতাই খুলতে দেননি নাসুম। লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে পতন ঘটে তুতীয় উইকেটের। স্কোরবোর্ডে ক্যারিবীয়দের রান তখন ৩৫।
সেই যে ধ্বস নেমেছে সফরকারী শিবিরে, আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দলটি। গড়তে পারেনি ন্যূনতম প্রতিরোধ। বাংলাদেশি স্পিনারদের সামনে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছেন ব্যাটাররা। উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত বিরতিতে। ৮২ রানে অষ্টম উইকেট হারানোর পর মনে হয়েছিল ১০০ রানের আগেই গুটিয়ে যাবে ক্যারিবীয়রা। শেষ পর্যন্ত শতরানের ঘর পার করেছে দলটি। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন আকিল হোসেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ৬ ওভারে ১১ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন নাসুম আহমেদ। ৭.১ মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৫ রান খরচায় পান দুই উইকেট। ৮ ওভারে ১৬ রানে তানভীর ইসলামও ঝুলিতে নেন দুই শিকার। ৯ ওভার বল করে এদিন বেশ খরুচে ঝিলেন রিশাদ হোসেন। দেন ৫৪ রান, বিনিময়ে অবশ্য তুলে নিয়েছেন তিন উইকেট।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সাইফ হাসান মিলে ভেঙেছেন ২৬ বছরের পুরোনো রেকর্ড।
১৯৯৯ সালে শাহরিয়ার হোসেন ও মেহরাব হোসেন মিলে জাতীয় স্টেডিয়াম ঢাকায় গড়েছিলেন ১৭০ রানের জুটি। সেটি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সৌম্য-সাইফ মিলে গড়েছেন ১৭৬ রানের জুটি। ২৫.২ ওভারে দুজনের গড়া জুটি বাংলাদেশের ওপেনিংয়ে মিরপুরে সর্বোচ্চ।
৭২ বলে সমান ৬টি করে চার ও ছক্কায় ৮০ রান করে সাইফ আউট হন। রোস্টন চেজের বলে লং অনে ক্যাচ নেন জাস্টিন গ্রিভস। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে বিদায় নেন সৌম্য। আকিল হোসেনের বলে ডিপ মিড উইকেটে আকিম অগাস্টের হাতে ধরা পড়েন সৌম্য। এর আগে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৬ বলে ৯১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন।
দুই ওপেনার বিধ্বংসী ব্যাটিং করলেও তাওহিদ হৃদয় এদিনও ছিলেন ধীর। যেন ব্যাট করতে সংগ্রাম করছেন তিনি। অ্যালিক আথানেজের শিকার হওয়ার আগে ৪৪ বলে ২৮ রান করেন হৃদয়। শুরুতে দেখেশুনে খেলা নাজমুল হোসেন শান্ত শেষ দিকে চড়াও হন ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর। তিন ছক্কায় ৫৫ বলে ৪৪ রান করে আথানেজের দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হন।
হঠাৎ খেই হারায় বাংলাদেশ। একটা সময় মনে হচ্ছিল দলীয় সংগ্রহ ৩০০ ছাড়িয়ে আরও দূর যাবে, সেখান থেকে বাংলাদেশ উল্টো উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। আকিল হোসেনের করা ৪৬তম ওভারে একে একে সাজঘরে ফেরেন মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, রিশাদ হোসেন ও নাসুম আহমেদ। আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা রিশাদ ফেরেন ৩ রানে। অঙ্কন ১০ ও নাসুম করেন ১ রান।
অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও নুরুল হাসান সোহান মিলে সংগ্রহ ৩০০-র কাছাকাছি নিয়ে যান। দুজনের ২৪ বলের জুটিতে এসেছে ৩৫ রান। শেষ বলে আউট হওয়া মিরাচ করেন ১৭ বলে ১৭ রান। একটি করে চার ও ছক্কায় সোহান অপরাজিত থাকেন ১৬ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আকিল নেন ৪ উইকেট। আতানেজ দুটি এবং গুরাকেশ মোতি ও রোস্টন চেজ পান একটি করে উইকেট।
ফলাফল : বাংলাদেশ ১৭৯ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী।