আজ সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ ||
১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ সোমবার, ১০:২৮ অপরাহ্ন
ক্ষমতায় গেলে স্বাধীন গণমাধ্যম তৈরি করবে বিএনপি : মির্জা ফখরুল
সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫
ফাইল ছবি
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন বা মেরুকরণের ফলে তারা নিজেরাই রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করবে বিএনপি।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) খুব পরিষ্কার। আপনারা দেখেছেন যে আমরা ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করেই বলেছি যে আমরা একটা স্বাধীন গণমাধ্যম দেখতে চাই এবং আমরা সেটাকে তৈরি করতে চাই।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ক্ষমতায় গেলে গণমাধ্যম সংস্কারে কমিশন করার পরিকল্পনা ছিল বিএনপির। ইতিমধ্যে সেই কমিশন করা হয়েছে। তবে কমিশনের প্রতিবেদন তৈরি হলেও সেটি নিয়ে পরবর্তীকালে কোনো আলোচনা হয়নি।
আমরা আশা করি, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব যদি জনগণের মাধ্যমে পাই, তাহলে আমরা নিঃসন্দেহে এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখব বলে বিশ্বাস করি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, একটা কথা না বলে পারছি না, আপনাদের সাংবাদিকদেরতো অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে—বিএফইউজে, ডিইউজে। আবার দুই দলের দুই ভাগ আছে, তিন ভাগ। নিজেরাইতো আপনারা দলীয় হয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো আপনাদের পকেটে ঢুকতে দিতে চায় না, কিন্তু আপনারাই যদি পকেটে ঢুকে যান, তখন কিন্তু দ্যাট বিকামস্ অ্যা প্রবলেম।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা দেখেছিতো গত ১৫ বছরে কী হয়েছে। গত ১৫ বছর আপনারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ফ্যাসিস্টকে সমর্থন করেছেন। এটা আমাদের দেখা, এ দেশের মানুষের দেখা। সেই জায়গাগুলোতে আপনাদেরও কমিটমেন্টের প্রয়োজন আছে, আপনারা ওই জায়গাগুলো থেকে নিজেরা বাইরে থাকবেন। আপনাদের কমিটমেন্ট থেকে জনগণের কাছে স্বাধীন সাংবাদিকতা করবেন।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলেই সংবাদমাধ্যমের উন্নয়ন হয় দাবি করে দলটির মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশের সমস্ত পত্রিকাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মাত্র চারটি পত্রিকা ছাড়া, সে পত্রিকাগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলছিল। এ অবস্থা থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় এসছেন, তখন তিনি একটা মুক্ত স্বাধীন সংবাদপত্রের ব্যবস্থা করেছেন। তখন অনেক সংবাদপত্র বেরিয়ে এসেছে এবং মাধ্যমগুলো চালু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরবর্তীকালে দেখেছি, বিএনপি যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছে, তখনই গণমাধ্যমকে উন্নত করবার জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে। তার মধ্যে আজকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আমরা দেখছি, সেই সময় কিন্তু কাজগুলো শুরু হয়েছিল।
রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে খেদ প্রকাশ করে এ প্রবীণ রাজনীতিক বলেন, সংস্কার যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ না করি, মনের মধ্যে না নিই; তাহলে এভাবে সংস্কার কতটুকু সম্ভব হবে আমি জানি না।
মতবিনিময় সভায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, সিপিবি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিজেসির নির্বাহী মিলটন আনোয়ার। বিজেসির ট্রাস্টিদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন তালাত মামুন ও ফাহিম আহমেদ। অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করে বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন।
বিজেসির আট দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—সম্প্রচারমাধ্যমের জন্য আলাদা আইন প্রণয়ন, একটি স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন, টিভি চ্যানেলগুলোকে পে-চ্যানেল ঘোষণা করা ও সম্প্রচারমাধ্যমকে শিল্প ঘোষণা এবং সম্প্রচার সাংবাদিকদের জন্য জবাবদিহিমূলক ‘কোড অব এথিকস’ প্রণয়ন; টিভি লাইসেন্স নীতিমালা ও মালিকানার ধরন নির্ধারণ, পরিচালনা পর্ষদে কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মতো কাঠামোগত সংস্কার, স্বাধীন অ্যাক্রেডিটেশন কর্তৃপক্ষ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাংবাদিকতার নীতিমালার প্রণয়ন ইত্যাদি।