নিজস্ব প্রতিনিধি ,নওগাঁ : নবান্ন উৎসব বাঙালি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। নতুন ধান উঠলেই ধান উৎপাদনের অন্যতম জেলা নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে উৎসবমুখরভাবে উদযাপন হয় এই নবান্ন উৎসব।
আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর পরই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এবং সে উপলক্ষে বিভিন্ন অঞ্চলে বসে গ্রামীণ মেলা।
এর ধারাবাহিকতায় দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর ইউনিয়নের পদ্মপুকুর গ্রামের পাশে পদ্ম পুকুর স্কুল মাঠে হয়ে আসছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ মেলা। প্রতিবছরের কার্তিক সংক্রান্তিতে বসে এই মেলা। শনিবার (১৬ নভেম্বর) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা।
নবান্নের এই মেলাকে ঘিরে গ্রামীণ মানুষের মধ্যে এক অন্য রকম উৎসবের আমেজে মুখর হয়ে ওঠে আশেপাশের ১০ থেকে ১২টি গ্রাম। বাড়িতে বাড়িতে শীতের পিঠা পুলি, নতুন ধান থেকে পাওয়া চালের পায়েস, ক্ষীর, ক্ষীরসা রান্না করা হয়। এদিকে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই জামাই মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন আসে, চলে খাওয়া দাওয়ার ধুম।
এক দিনের এ মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোকানীরা আগের দিন এসে দোকানে মিষ্টি মিঠাই, বাঁশ, বেত, মাটির তৈরি নকশি পাতিল, মাটির ব্যাংক, পুতুল, কাঠের তৈরি ফার্নিচার, কসমেটিক, খেলনা, বাঁশি, বেলুন, ঘূর্ণি, লোহার তৈরি হাসুয়া, বটি, চাকু, কাগজের ফুল নানা রকম মুখরোচক খাবারেরর দোকান দিয়ে নানা জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন।
মেলায় আগত চন্দনা রানী পাল নামে এক নারী দোকানি বলেন, অনেক বছর ধরে এই পদ্মপুকুর নবান্নের মেলাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করে আসছি। আগে আমার পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল, ঢাকনা, প্রদীপ দেওয়া ছোট বাটি, ধূপ জ্বালানো ধুপতীসহ নানা রকম মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিক্রি করত, এখন আমরা করি।
মেলার একপাশে চলে ‘বউ মেলা’। বউ মেলায় বিশেষ করে নারীদের কসমেটিক দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের শত শত নারীদের বউ মেলায় আগমন ঘটে।
মেলা দেখতে আশা কিশোরী স্মৃতি রানী বলেন, মেলায় এসে তার অনেক ভাল লাগছে। কসমেটিক ও ফুলের মালা কিনেছে সে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন, খুব ছোট বেলা থেকে এ মেলা দেখে আসছি। আসলে কবে থেকে শুরু হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল।
মেলা কমিটির সভাপতি শ্রী মনজ কুমার জানান, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এ মেলা হয়ে আসছে। মূলত নবান্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে আমরা এই মেলার আয়োজন করে থাকি। তবে এ দিন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংক্রান্তী উপলক্ষে কালি পুজা অর্চনা করেন এখানে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন এ মেলায়।