আবু বক্কর সিদ্দিক , গাইবান্ধার: সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নূতন দুলাল ভরট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগে বৈধতা না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবী করছেন জনৈক জাহিনুর বেগম।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে জাহেদুল ইসলাম যথারীতি দায়িত্ব পালন করছেন।
এরই একপর্যায়ে জাহিনুর বেগম নামে অপর একজন নিজেকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দাবীতে প্রভাববিস্তারে ন্যাস্ত রয়েছেন। এনিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।
গত রবিবার (১২ নভেম্বর) বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকালে জাহেদুল ইসলাম বিভিন্ন প্রমাণাদী প্রদর্শন করে বলেন, জাহিনুর বেগম কৃষি শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে সংশ্লিষ্ট সুবিধাদী ভোগ করলেও তার নিয়োগের কোন বৈধতা নেই। সম্পূর্ণরূপে অবৈধ ও জালিয়াতিমূলক। যা, আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। জাহিনুর বেগম ২০১০ সালের ৭ এপ্রিল বে-সরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সুপারিশক্রমে সহকারি শিক্ষক (কৃষি) পদে নিয়োগ অতঃপর যোগদান। এর পরবর্তী একই সালের ১ জুলাই থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি অংশের সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি ভোগ করছেন। পরবর্তী ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর ও ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই এনটিআরসিএ'র সহকারি পরিচালক তাজুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবরে পৃথক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- 'জাহিনুর বেগমের ২০০৬ সালের অর্জিত শিক্ষক নিবন্ধন (কৃষি শিক্ষা) সনদপত্রটি জাল ও ভুয়া মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে'। তা ধামাচাপা দিতে ঐ নিয়োগ ও যোগদান অস্বীকার করে জাহিনুর বেগম ২০০৩ সালে একই পদে স্থানীয়ভাবে নিয়োগ দেখাতে ব্যাকডেট (বিগত তারিখ) উল্লেখ করে ডিজি-(ই) প্রতিনিধি হিসেবে গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহানা বানু, তৎকালীণ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণের স্বাক্ষর ও স্থানীয় একটি দৈনিক জালিয়াতি করে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র সৃজন করেন। মর্মে, দৈনিকটির সম্পাদক ও প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্টগণ পত্রিকা ও স্বাক্ষর তাঁদের নয় বলে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন।
ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য চাঁদ মিয়া, এমদাদুল হক, শিক্ষক প্রতিনিধি মতিউর রহমান, ইব্রাহিম আলী সরকারসহ অনেকেই বলেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৯ তারিখে অবসর গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক আকবর আলী সরকার। এরপর মোজাম্মেল হককে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হয়ে। তার আমলে কৃষি শিক্ষক পদে জাহিনুর বেগমকে নিয়োগের কথা তারা জানেন না।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহ-শিক্ষক আশরাফ আলী, সহ-শিক্ষক শামছুল হক, আশাদুজ্জামান, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল খালেক, তারা মিয়া, মাসুদ ইসলাম, কতিপয় শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ স্থানীয়রা বলেন, জাহিনুর বেগম এনটিআরসিএ'র সনদ জালিয়াতি করে কৃষি শিক্ষক পদে যোগদানের পর সরকারি অংশের সুবিধাদী ভোগ করছেন। তা প্রমাণীত হলে প্রধান শিক্ষক (অবঃ) মোজাম্মেল হককে ম্যানেজ করে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখাতে ব্যাপক জালিয়াতি করেন। এরপর, বহিরাগত লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে প্রভাববিস্তার, ব্যাপক ক্ষতিসাধন, ভয়ভীতি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন ঘটান।
এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক (অবঃ) মোজাম্মেল হক মোবাইলফোনে কথা না বলে সাক্ষাতে বলতে চেয়েও কোনভাবেই তার সাক্ষাৎ মিলছেনা। তিনি নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। অভিভাবক সদস্যরা বলছেন, জাহিনুর বেগমের জালিয়াতির সঙ্গে মোজাম্মেল হক জড়িত ছিল। তাঁর বড় ভাই জীবদ্দশায় কমিটির সভাপতি ছিলেন বলে অনেক বড় বড় দোষ করেও তিনি পার পেয়ে গেছেন।
জাহিনুর বেগম বলেন, এখন আমার বলার কিছু নেই। তার পক্ষে ডিজি থেকে চিঠি আসতেছে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করি। তারপর তিনি কথা বলবেন। তিনি জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ করলেও কোন প্রমাণ দেখাতে পরেননি।
প্রধান শিক্ষক (অবঃ) আকবর আলী সরকার বলেন, তাঁর চাকরিকালে জাহিনুর বেগমকে বিদ্যালয়ে কোন পদে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২০০৬ সালের মার্চ মাসের ২১ তারিখে অবসর গ্রহণের আগে জাহেদুল ইসলামকে নিয়োগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এব্যাপারে মোবাইলফোনে কথা হয়- উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (মাধ্যমিক), দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাধ্যমিক শাখা) উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরে দায়িত্বরতগণের সঙ্গে।
পৃথক পৃথক বক্তব্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত মাসের ২৯ অক্টোবর (ডিজিতে) একটা তদন্ত হয়েছে। প্রতিবেদন আসলে সু-নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, আমি নিজেই স্কুলে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। নানাভাবে জেনেছি জাহেদুল ইসলাম সঠিক আছে। জাহিনুর বেগমের কোন বৈধতা পাইনি। সে বিষয়ে উপরে লিখেও কাজ হচ্ছেনা কেন, তা জানিনা।
দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, স্কুলটা নিয়ে দু'পক্ষের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ ও মামলাও আছে। অনেক সমস্যা আছে বলে শুনেছি। নথিপত্র না দেখে আর কিছু বলা যাচ্ছেনা।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) আব্দুল আজিজ বলেন, আর মাত্র কয়েকদিন পরেই চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছি। জাহিনুর বেগমের বিরুদ্ধে জালিয়াতির বিষয়ে রংপুর-খুলনা বিভাগের জন্য যিনি দায়িত্বে থাকবেন তাকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলবো।