৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ৩জন খুনের ঘটনায় সাধারণ ও নিরিহ মানুষের মধ্যে ভয়, ভীতি ও আতংকত দেখা দিয়েছে। পাবনা শহরের বড় ব্রিজ সংলগ্ন বর্ণমালা কিন্ডার গার্টেনের চত্বরে ছুরিকাঘাতে ও গলাকেটে কলেজ ছাত্রকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এদিকে গুলি ও জবাই করে পাবনার ঈশ^রদীর পাকশিতে যুবলীগ কর্মীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নে বিএনপি’র ২ গ্রæপের সংঘর্ষে ১জন নিহত হয়েছে।
পাবনা'য় সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তুষার নামে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত তুষার (২০) পাবনা পৌর এলাকার রাধানগর ময়দানপাড়ার আব্দুল মান্নানের ছেলে। সে জুবিলি স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র ।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে পাবনা মধ্য শহরের বড় ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যাক্তি জানান, রাত ৯টার দিকে নিহত তুষার আলিয়া মাদ্রাসার সামনে একটি মোটর সাইকেল গ্যারেজে তার মোটরবাইকটি মেরামত করছিল। এ সময় ১৪-১৫ জনের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে ধাওয়া করে। সে দৌড়ে পাশের বর্ণমালা কিন্ডার গার্টেনের চত্বরে ঢুকে পড়ে। সন্ত্রাসীরা সেখানে তাকে ছুরিকাঘাত ও গলাকেটে পালিয়ে যায়। তুষারকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ৩জনকে আটক করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, পুর্ব শত্রæতার জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। নিহতের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান পাবনার পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান। তুষার হত্যাকান্ডের জের ধরে সন্দেহভাজন একজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ কয়েকটি বাড়ি ঘরে হামলা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। উল্লেখ্য গত বছর শহরের ওরিন নামে এক যুবককে হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছিলেন নিহত তুষার।
এদিকে পাবনার ঈশ্বরদির পাকশিতে ছাত্রলীগ নেতা মনা হত্যা মামলার প্রধান আসামী ওয়ালিপ হোসেন মানিক নামে এক যুবলীগ কর্মীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার দিয়ার বাঘোইল গ্রামে মানিকের নিজ বাড়ির পেছনে এই ঘটনা ঘটে। নিহত মানিক পাকশি ইউনিয়ন যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও ওই এলাকার ইউনুছ আলীর ছেলে। জানা যায়, মানিক ঈশ্বরদীর আলোচিত মনা হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি ছিলেন। গত ২২ দিন আগে জামিনে মুক্ত হন তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, মানিক সকালে বাড়ির পিছনে দাড়িয়ে ছিলেন, এ সময় মুখ বেধে কয়েকজন চিহিৃত সন্ত্রাসী প্রথমে গুলি করে ও পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে চলে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোঃ শহিদ জানান, লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্তি পুলিশ মেতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের চিহিৃত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে শনিবার দুপুরে বিএনপি’র দুই গ্রæপের সংঘর্ষে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের বেতে পাড়ায় জালাল নামে একজনকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে প্রতিপক্ষরা। পরবর্তিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। হঠাত পাবনায় গত ৩৬ ঘন্টায় ৩জন হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিরিহ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিতির সঞ্চার হয়েছে। জনমনে দেখা দিয়েছে আতংক। হত্যার পরপরই বাড়ি ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে সাধারণ মানুষের দাবি, হত্যাকান্ডের পর এলাকার নিরিহ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহবান জানান।