মোনাজাত শেষ হয় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে। এর মধ্য দিয়ে আজ শেষ হয় প্রথম ধাপের ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের শুরায়ী নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোনাজাতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নেওয়া লাখ লাখ মুসল্লির ‘আমিন আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে টঙ্গীর তুরাগ তীর। মোনাজাতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্য, শান্তি, সমৃদ্ধি, ইহকাল ও পরকালের নাজাত এবং দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য দোয়া করা হয়। এ ছাড়া সব ধরনের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
আখেরি মোনাজাতে নিজের আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লি প্রার্থনা করেন আখরি মোনাজাতে। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা, মহানবী হযরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পাঠের মাধ্যমে মোনাজাত শুরু হয়। মোনাজাতে ইজতেমার কামিয়াবি, অংশগ্রহণকারীসহ সব মুসলমানদের গুনাহ মাফ, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, বিশ্ব শান্তি, বিশ্ববাসীর সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
গত তিন দিন কুয়াশা-শীত উপেক্ষা করে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে ময়দান। শিল্প নগরী টঙ্গী ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গী ময়দান ও আশপাশের এলাকায় স্থান না পেয়ে যে যেখানে পেরেছেন বসে পড়েন রাস্তায়, খোলা মাঠে বা বাসার ছাদে কিংবা যানবাহনেই। তবুও তাদের কোনো আক্ষেপ নেই। আখেরি মোনাজাতে যেকোনোভাবে অংশ নিতে পেরেই তারা খুশি। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে ভোর থেকে দলে দলে যোগ দেন হাজার হাজার মানুষ। মধ্যরাত থেকে ইজতেমা ময়দান এলাকায় বাস চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটেই রওনা হন মুসল্লিরা। তবে ঢাকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে মেট্রোরেলে করে ইজতেমা এলাকায় এসেছেন অনেকে। এতে অফিস সময়ে হাজার হাজার মানুষের ভিড় দেখা গেছে মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে।
এর আগে তাবলীগ জামাতের শুরায়ী নেজামের মুখপাত্র হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, আজ রোববার সকাল থেকে হেদায়েতের বয়ান হয়েছে। যারা ইজতেমা ময়দান থেকে চিল্লা অথবা তিন চিল্লার জন্য জামাতে বের হবেন, তারা জামাতে যেয়ে কী আমল করবেন এবং যারা নিজ এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন তারা যেয়ে কী আমল করবেন, তার দিকনির্দেশনামূলক বয়ান করা হয়। বয়ান করেছেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান এবং অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন।
গত বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর থেকেই আমবয়ানের মধ্যে দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা ‘ইমান ও আমলের’ ওপর বয়ান করেন। শুক্রবার ফজরের পর থেকে বয়ান করছেন পাকিস্তানের মাওলানা জিয়া উল হক। এ ছাড়া আজ বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা জুবায়ের। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহমেদ লাট। পরে বিভিন্ন সময় ভাগ করে তাবলীগ জামায়াতের আলেমরা বয়ান করেন। শনিবারও একইভাবে বয়ান হয়। এদিন যৌতুক ছাড়া বিয়ের একটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে, প্রথম ধাপের ইজতেমায় গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে কয়েকজন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা দুই ধাপে ইজতেমা করছেন। আজ আখেরি মোনাজাতে শেষ হয় প্রথম ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে অংশ নিয়েছেন ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা। আগামীকাল সোমবার (৩ ফেরুয়ারি) থেকে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এ ধাপে ২২ জেলা ও ঢাকার অন্য অংশের মুসল্লিরা অংশ নেবেন। আর ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা করার কথা রয়েছে।