আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে পূর্বঘোষিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এমন তথ্য জানানো হয়। ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তি থেকে নতুন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন গঠনের প্রক্রিয়া’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন দলটি কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি চর্চা করবে না। দলের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে নির্বাচন করা হবে।
তবে, সংবাদ সম্মেলনে নতুন গঠন হতে যাওয়া ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে কারা আসবে এবং কবে নাগাদ সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করবে তা জানানো হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের এবং আবু বাকের মজুমদার।
এতে জানানো হয়, নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনের লক্ষ্যে আজ (সোমবার) ও আগামীকাল মঙ্গলবার সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জনমত জরিপ ও সদস্য সংগ্রহ করা হবে। অনলাইন ও অফলাইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, জাবি, জবি, রাবি, চবিসহ দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, সম্ভাব্য সব কলেজ, স্কুল ও মাদরাসায় এই প্রচারণা চালানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই ছাত্র সংগঠন কখনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক চর্চা করবে না। এর কোনো মাদার পার্টি থাকবে না এবং মাদার পার্টির কোনো অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না। শিক্ষার্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানে যে রায় দিয়েছে সে অনুযায়ী আমাদের দল গঠিত হবে। আমরা এটা ওয়াদা দিচ্ছি।
শিগগিরই একটি স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশ করা হবে। তবে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের তারিখ নির্ধারিত হয়নি। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের থেকে পরামর্শ গ্রহণ সাপেক্ষে সংগঠনটির সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এই সংগঠনে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বটম-টপ নেতৃত্ব তৈরি করা হবে। নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক ফি-ই হবে সংগঠনটির অর্থনৈতিক কাঠামোর মূল ভিত্তি।
আব্দুল কাদের বলেন, আমরা চাইলেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে থেকে সব রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব না। এমন অনেক কাজ আছে যা বৈষম্যবিরোধীতে থেকে করা সম্ভব না। তাই, সাধারণ ছাত্রদের দায়বদ্ধতা থেকে এই ছাত্র সংগঠনের সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদল, শিবির, বাম, ইসলামপন্থি সবাই ছিল। অভ্যুত্থান শেষে সবাই যার যার অবস্থানে ফিরে গেছে। এখন কেউ ২৪কে ধারণ করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে তারা চাইলে এই সংগঠনে যোগ দেবে। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃহত্তর স্বার্থ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।
‘স্টুডেন্টস ফার্স্ট, বাংলাদেশ ফার্স্ট’ স্লোগানকে সামনে রেখে নতুন ছাত্রসংগঠন গঠনে কিছু মৌলিক প্রস্তাবনা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা। প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. আদর্শিক বাইনারির কালচারাল দ্বন্দ্বের বাইরে গিয়ে মধ্যমপন্থি ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
২. জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অন্তর্ভুক্তিমূলক ছাত্ররাজনীতি তৈরি করা, যেখানে পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে অবমূল্যায়ন করা হবে না।
৩. আমাদের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ভিত্তি। সবার অংশগ্রহণে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনীতিই আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।
৪. মূলধারার রাজনৈতিক পরিসরে নারীদের যে অনুপস্থিতি রয়েছে সেটিকে অ্যাড্রেস করে নারীর রাজনৈতিক মানদণ্ড বিনির্মাণ করা, রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নারীবান্ধব করে তোলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান সুযোগের সৃষ্টি করা।
৫. শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপসহীন ছাত্ররাজনীতির প্রতিশ্রুতি।
৬. বাংলাদেশের সংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে স্বীকার করে এবং ৪৭, ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৮, ৬৯, ৭১, ৯০, ২৪-এর সকল গণআন্দোলন এবং ছাত্রজনতার সংগ্রামী চেতনাকে ভিত্তি করে ছাত্ররাজনীতি সক্রিয় থাকবে।
৭. ফ্যাসিবাদকালীন সব শিক্ষা পরিসরে পরিকল্পিতভাবে যে রাজনৈতিক ডিজএম্পাওয়ারমেন্ট করা হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামোকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। নতুন ছাত্ররাজনীতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থী সংসদ কাঠামো পুনর্বহালে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে।
৮. ছাত্র-নাগরিক সংহতি রক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্র-নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।