ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি, এনআইডি সেবা বন্ধ
বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০২৫
ফাইল ছবি
তোফায়েল আহম্মেদ, নিজস্ব প্রতিনিধি : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্তে আগামী মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময়ের মধ্যে বিদ্যমান আইন বাতিল করে এনআইডি সেবা সংক্রান্ত পূর্বের আইন বহাল করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিলে আগামী বুধবার (১৯ মার্চ) থেকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে পূর্ব ঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সময় বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘আমরা ১১টা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি। ভোটারের সব ব্যক্তিগত তথ্যের হেফাজতকারী নির্বাচন কমিশন। এনআইডি নির্বাচন কমিশেনই থাকবে। আইনে অন্যকে দেবেন, আর আমরা কাজ করব দিনের পর দিন। বর্তমান যে আইন আছে, তা বাতিল করে পূর্বের অবস্থায় যেতে হবে। ’
ইসির উপসচিব বলেন, ‘আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নিলে আগামী বুধবার সারা বাংলাদেশে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে।’
মানববন্ধনে ‘এক দুই তিন চার, এনআইডির পিছু ছাড়’, ‘ভোট চুরির ধান্ধা বন্ধ কর, এনআইডির পিছু ছাড়’, ‘ভোটার তালিকা ও এনআইডি একসূত্রে গাঁথা, বিভক্তি মানি না’, ‘এনআইডি রাজনৈতিক হাতিয়ার নয়, এটি ইসির অধিকার’, ‘ইসির অধীনে এনআইডি, জনগণের নিরাপত্তার গ্যারান্টি’সহ নানান ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব স্লোগান প্ল্যাকার্ডেও লেখা রয়েছে।
এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে আজ সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এনআইডি’র সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সারা দেশে নিজ অফিসের সামনে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত জানায়। এর ফলে এই দুই ঘণ্টা বন্ধ রয়েছে সারা দেশে সব ধরনের এনআইডি সেবা।
এদিকে বুধবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, আপাতত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও ভবিষ্যতে তা স্বাধীন সংস্থার আন্ডারে (অধীনে) যেতে হবে।
জানা যায়, ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন (কমিশন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া পর্যালোচনার লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা করে গত ৩ মার্চ।
উপদেষ্টা পরিষদের নির্দেশনায় বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। তবে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক। এই উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করতে পারে।