বুধবার (২৩ এপ্রিল) এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এ সপ্তাহে মস্কো সফর করবেন। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে তার চতুর্থ রাশিয়া সফর।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, লন্ডনের এই বৈঠক এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ট্রাম্প দখলকৃত ক্রিমিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত।
সংবাদমাধ্যমগুলোতে আরও বলা হয়েছে, এ প্রস্তাব প্রথম উঠেছিল গত সপ্তাহে প্যারিসে অনুষ্ঠিত অনুরূপ এক বৈঠকে। এরপর ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন, আলোচনায় দ্রুত অগ্রগতি না হলে তিনি এ উদ্যোগ থেকে ‘পসরে আসতে’ পারেন।
বুধবারের আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কূটনৈতিক উপদেষ্টা ইমানুয়েল বোন।
ইউক্রেনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়ারমাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ।
এদিকে এই সপ্তাহে রাশিয়া আবারও ইউক্রেনে বিমান হামলা শুরু করেছে। এর আগে ইস্টারের সময় একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি দেখা গিয়েছিল।
মঙ্গলবার জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন কেবল যুদ্ধবিরতির পর রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা কোনো তড়িঘড়ি করে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।
দনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের গভর্নর বুধবার জানান, ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় মার্গানেতস শহরে কর্মী পরিবহণকারী একটি বাসে রুশ ড্রোন হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে গোলাবর্ষণে একজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেন, ‘এই সপ্তাহেই’ একটি চুক্তি হতে পারে। যদিও কোনো যুদ্ধবিরতি তো দূরের কথা, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার ক্ষেত্রেই অগ্রগতির তেমন কোনো লক্ষণ নেই।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, তিনি একটি মার্কিন শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যদিও তার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। প্যারিস বৈঠকের পর তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
রুবিও ও ট্রাম্প উভয়েই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি দ্রুত অগ্রগতি না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র শান্তি আলোচনা থেকে সরে যেতে পারে।
ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট মঙ্গলবার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এই যুদ্ধ শেষ করতে চান, উভয় পক্ষের হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে চান। এ বিষয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং উভয় পক্ষের প্রতি তার বিরক্তি তিনি পরিষ্কারভাবেই প্রকাশ করেছেন।’
বুধবারের আলোচনা গত সপ্তাহের প্যারিস বৈঠকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নিম্ন পর্যায়ের।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি সংসদে বলেন, আলোচনায় ‘একটি যুদ্ধবিরতি কেমন হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায়’—সে বিষয়গুলো আলোচিত হবে।
ট্রাম্প গত মার্চে একপাক্ষিকভাবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যেটির মৌলিক ধারণা কিয়েভ গ্রহণ করলেও পুতিন প্রত্যাখ্যান করেন।
হোয়াইট হাউস পৃথকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ৩০ দিনের জন্য জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ক্রেমলিন বলেছে, তারা এ ধরনের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে বলে মনে করে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো প্যারিস বৈঠককে একটি ‘ব্রেকথ্রু’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ইউরোপ আগে ভয় পেয়েছিল যে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া থেকে তাকে বাদ দেওয়া হতে পারে, কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা একই টেবিলে বসেছেন।
ইউরোপীয় নেতারা এখন চিন্তিত, যদি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহার করে নেন, তবে কীভাবে তারা ইউক্রেনকে সমর্থন দেবেন।