বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে এখন পুরোদমে বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, পাল্টা জবাবে আমেরিকান পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে বেইজিং।
১. কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে চীনের
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, যার ফলে তারা অন্যান্য ছোট দেশের তুলনায় শুল্কের প্রভাব ভালোভাবে সামলাতে পারে। ১০০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা বিশিষ্ট বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে চীনের, যা রপ্তানিনির্ভর শিল্পকে কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি জনমত নিয়ে ততটা চিন্তিত নয় বলে সরকারের কষ্ট সহ্য করার মানসিকতা অনেক বেশি। তবে বেকারত্ব ও সম্পত্তি বাজারে মন্দার কারণে জনঅসন্তোষ একটি বাস্তব হুমকি।
২. ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ
চীনের লক্ষ্য এখন কেবল ‘বিশ্বের কারখানা’ হওয়া নয়, বরং প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছানো। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), চিপ, রিনিউএবল এনার্জি ইত্যাদিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছে তারা।
চ্যাটজিপিটির প্রতিদ্বন্দ্বী ‘ডিপসিক’ এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক বিওয়াইডি এর মতো উদাহরণ চীনের অগ্রগতির প্রমাণ। তারা আগামী দশকে এক ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে উদ্ভাবনী প্রযুক্তির জন্য।
৩. ট্রাম্পের আগের সময়ের থেকে শিক্ষা
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের পর চীন নিজের বাজার বৈচিত্র্য করতে শুরু করে। বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক দৃঢ় করেছে।
এক সময় যুক্তরাষ্ট্র চীনের সয়াবিনের ৪০ শতাংশ সরবরাহ করত, এখন তা কমে ২০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিল এখন প্রধান সয়াবিন সরবরাহকারী দেশ।
২০২৩ সালে চীনের প্রধান রপ্তানি বাজার ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, যেখানে ৬০টি দেশের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল তাদের।
৪. মার্কিন বন্ড বাজারে চাপ সৃষ্টি
চীন বর্তমানে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন ডলার মার্কিন সরকারি বন্ডের মালিক, যা ট্রাম্পের নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সম্পূর্ণভাবে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করলে চীনও ক্ষতির মুখে পড়বে। ডলার বাজার ও ইউয়ানের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হতে পারে।
এটি একটি আলোচনার কৌশল বা চাপের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু ‘আর্থিক অস্ত্র’ হিসেবে নয়।
৫. দুর্লভ খনিজ পদার্থে একচেটিয়া আধিপত্য
চীনের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে ‘রেয়ার আর্থ’ উপাদানে তাদের প্রাধান্য। এগুলো ইলেকট্রিক গাড়ি, বায়ু টারবাইন, ডিফেন্স টেকনোলজি এবং এআই চিপ তৈরিতে অপরিহার্য।
চীন বিশ্বের ৬১ শতাংশ রেয়ার আর্থ উৎপাদন এবং ৯২ শতাংশ পরিশোধনের দায়িত্বে। ট্রাম্পের নতুন শুল্কের পর চীন সাতটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
এছাড়া, অ্যান্টিমনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন, যার দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রেয়ার আর্থ বাজারে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক উৎপাদন খাতে বিশাল প্রভাব ফেলবে।