লিটন মোল্লা, নিজস্ব প্রতিনিধি: বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গঠনে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র নিশ্চিতে আগামী ৩ আগস্ট ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সবাইকে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা শক্তি। কিন্তু বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না।
’
আজ শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরের বেরিরপাড় পয়েন্টে এনসিপি আয়োজিত ‘জুলাই পদযাত্রা’র এক পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরেও বাংলাদেশকে পুরোনো পদ্ধতিতে চালানোর চেষ্টা অবব্যাহত আছে। সেটা তরুণরা করতে দেবে না। অন্তর্বর্তী সরকার আশাহত করেছে তরুণদের, নির্বাচনকে সামনে রেখে সব একাকার করা হচ্ছে, যা কখনো কাম্য নয়। ’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সংস্কার ও নতুন সংবিধানের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে বিভিন্ন শক্তি। কিন্তু সংস্কার আর মানুষের সব অধিকার নিশ্চিত না করে নির্বাচন নিয়ে পড়ে থাকলে হবে না। পুলিশ হত্যার দায় ২৪ এর যোদ্ধাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, কিন্তু এটা করেছে ফ্যাসিস্ট সরকারের গুন্ডা বাহিনী।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই, আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা শক্তি, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই করা শক্তি। কিন্তু বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। এই নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না। গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তৎকালীন ফ্যাসিস্ট প্রদান শেখ হাসিনা। আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছি। এখন গণতান্ত্রিকভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংস্কারের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। এজন্য আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি, মানুষের কাছে কথা শুনছি।’
এনসিপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘মুজিববাদ এখনও নানাভাবে, ছলে-বলে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই দেশে মুজিববাদের জায়গা হবে না। মুজিববাদ মানেই একদলীয় শাসন, লুটেরা, সাম্প্রদায়িকতা আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল। মুজিববাদকে এই দেশে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।’
পথসভায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা যে নতুন বাংলাদেশের কথা বলছি, এখন পর্যন্ত ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি। সরকারি অফিসে গিয়ে সেবা নিতে চাইলে এখনও দালালদের খপ্পরে পরতে হয়। ঘুষ দিয়ে এখনও সেবা নিতে হয়। আগামীতে ঘুষ দিয়ে সরকারি সেবা নেতে হবে, এমন বাংলাদেশ আর আমরা দেখতে চাই না।’
আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে দেশি বিদেশি নানা গোষ্ঠী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জুলাই আন্দোলনে আমরা যারা রাজপথে ছিলাম, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করব না।’
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আমরা যতদিন বেঁচে আছি, ফ্যাসিস্টদের এদেশে ফিরতে দেবো না।’
সিলেট থেকে পৌঁছে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে মৌলভীবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বেরিরপাড় পয়েন্টে সভাস্থলে গিয়ে শেষ হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব অনিক রায়ের সঞ্চলনায় পথসভায় আরও বক্তব্য দেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ ও সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দীনা।
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, এহতেসামুল হক, মনিরা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, যুবশক্তির যুগ্ম আহ্বায়ক মারুফ আল হামিদ, কেন্দ্রীয় সংগঠক জাকারিয়া ইমন, এনসিপির মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলম, সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী এহসান জাকারিয়া, যুগ্ম সমন্বয়কারী কবিরুল ইসলাম রুমন, আব্দুল বারী খোবায়েব ও সাফওয়ান জাহান চৌধুরীসহ অন্যান্যরা।
পদযাত্রা শেষে দুপুর ৩টায় শ্রীমঙ্গলের চৌমোহনা চত্বরে জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা।