আজ
বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫ ||
১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বুধবার, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ১২টি বিষয়ে একমত হওয়া ইতিবাচক
মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সৈয়দ বদরুল আলম, নিজস্ব প্রতিনিধি: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ১২টি বিষয়ে একমত হওয়াকে ‘ইতিবাচক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
শফিউল বারী বাবু স্মৃতি পরিষদ এ সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা খুব খুশি হই, যখন পত্রিকায় দেখি একটা পজেটিভ নিউজ। আমাদের রিপন ভাই (ড. আসাদুজ্জামান রিপন) সব নেগেটিভ কথা বলে গেছেন, উনি কিছুই ভালো দেখছেন না। আমি কিছু ভালো দেখছি। আজকেই খবরের কাগজে দেখলাম, ১২টা মৌলিক বিষয় পরিবর্তনে সবগুলো দল এক হয়েছে। দিস ইজ অ্যা পজেটিভ স্টেপ। আমি ধন্যবাদ জানাই ড. আলী রীয়াজকে (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি)। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে তার টিমকে নিয়ে অন্তত ওই জায়গায়টায় আসার চেষ্টা করেছেন।’
চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদেরকে অনেকে খোটা দিয়ে কথা বলে, আমরা সংস্কার চাই না। সংস্কারের চিন্তাটাই তো আমাদের, সংস্কারের শুরু আমাদের দিয়ে। ১৯৭৫ সালের আগে শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ফ্যাসিজমের মূল হোতা, তিনি গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে একদলীয় শাসন বাকশাল করে দিয়েছিলেন। সেই বাকশাল থেকে ফিরিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসে মাল্টি পার্টি সিস্টেমের এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করলেন কে? আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। তিনি (জিয়াউর রহমান) মুক্ত করলেন সমস্ত অন্ধকারকে। এই বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইত্যাদি সংস্কার শুরু করেছিলেন জিয়াউর রহমান, এগুলো ছিল তার রাজনৈতিক সংস্কার।’
‘আর অর্থনৈতিক সংস্কার কী ছিল? একটা বদ্ধ তথাকথিত ভ্রান্ত অর্থনৈতিক ধারণা থেকে তিনি নিয়ে এলেন মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণা এবং সেটা করায় তিন থেকে সাড়ে তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশের চেহারা বদলে গেল। যে কিসিঞ্জার বলেছিলেন, বাংলাদেশকে বটমলেস বাসকেট, সেই আমেরিকা বলল, বাংলাদেশ এখন একটা সম্ভাবনাময় দেশ। এসব কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, জানতে হবে বার বার’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আমলে হওয়া সংস্কারের কথা তুলে ধরে দলের মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভার্নমেন্টকে পার্লামেন্টারি ফর্ম অব গভার্মেন্টে নিয়ে গেলেন। এখানে যারা বসে আছেন, তারা ৯ বছর দেশনেত্রীর সঙ্গে লড়াই করেছেন রাস্তায়। একইভাবে জেল খেটেছেন স্বৈরাচারকে দূর করার জন্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) কেয়ারটেকার সরকারকে মানেননি প্রথমে, পরে যখন উনি দেখলেন এটা মানলে দেশের মানুষের উপকার হবে, গণতন্ত্র একটা শক্তিশালী পথ পাবে, ভিত্তি পাবে—তিনি সেটা মেনে নিয়ে কেয়ারটেকার গভার্নমেন্টকে সংবিধানে সন্নিবেশিত করলেন সংসদের মাধ্যমে। যার ফলে ওই সরকারের অধীনে তিনটা নির্বাচন হয়েছে, যে নির্বাচনগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি, মানুষের ভোটের অধিকার তা নিশ্চিত করেছে। মহিলাদের ক্ষমতায়, শিশুদের বেড়ে উঠার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে জনমুখী করা—এই সবই সংস্কারের মাধ্যমে আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়া দিয়ে শুরু। সুতরাং সংস্কার তো আমাদের, এই দলের—বিএনপির। সংস্কারকে আমরা ভয় পাই না, আমরা সংস্কারকে স্বাগত জানাই।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সমস্যাটা ওই জায়গায় হয়, যখন দেখি, নতুন নতুন চিন্তাভাবনা আসছে। সেই চিন্তার সঙ্গে আমাদের দেশ-জাতি পরিচিত নয়। এ ব্যাপারে আমি কমেন্ট করব না। একটা কমেন্ট করতে চাই, পিআর—প্রোপরসনেট রিপপ্রেজেন্টেশন বা আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন নিম্নকক্ষে, এটা আমাদের দেশের মানুষ বুঝে না। তারা (মানুষ) বলে, পিআর কী জিনিস ভাই? যারা এখনও ইভিএমে ভোট দেওয়া বুঝে না, যার ফলে ইভিএমে ভোট দেয় না, তারা পিআর বুঝবে কী করে? এই চিন্তাভাবনা থেকে দূরে সরে যেতে হবে। দুঃখজনক হলো, এটাকে আমাদের দেশের দুই-একটা রাজনৈতিক দল প্রোমোট করে। শুধু প্রোমোট না, পণ করে বসে আছে—এটা না হলে নির্বাচনে যাবে না। এখন কী বলব বলেন?’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব, ‘এদেশের মানুষ যেটাতে অভ্যস্ত সেই ভোটের ব্যবস্থা করেন, তার প্রতিনিধিত্বে ব্যবস্থা করেন, জনগণের প্রতিনিধি থাকে—এমন পার্লামেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন, তাহলেই সমস্যাগুলো সমাধান হবে, অন্যথায় হবে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাইরে থেকে এসে বসে কাউকে আপনার নতুন নতুন চিন্তাভাবনা দিয়ে কিন্তু দেশের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, অবিলম্বে সংস্কারগুলো শেষ করুন, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন আর দয়া করে নির্বাচনের যে তারিখ নির্ধারণ করেছেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকে বসে, যেটাতে জাতি অনুপ্রাণিত হয়েছে, আশান্বিত হয়েছে, সেই সময়টাতে নির্বাচন দিন, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিন।’
চাঁদা আদায়ের অভিযোগে চার সমন্বয়ক গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা চারদিকে যা দেখতে পাই, আমি গতকালই বলেছিলাম এনিয়ে। অনেক সমালোচনা হচ্ছে, বলাও হচ্ছে—আমি বেদনায় নীল হয়ে যাই। এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা হযেছে, কিন্তু বাস্তবতা তাই। আমরা যারা রাজনীতি করতে এসছিলাম একটা পরিবর্তনের জন্য। কিছুক্ষণ আগে আমি একটা প্রোগ্রামে ছিলাম বনানীতে ‘মাঠের ডাক ও আমরা বিএনপি পরিবারের’ উদ্যোগে আন্দোলনে যেসব ছেলেরা শহীদ হয়েছে, তাদের পরিবারের প্রতি সন্মাননা জানানোর একটা অনুষ্ঠানে। আমার বার বার মনে হয়েছে, এই যে ছেলেগুলো প্রাণ দিল, এই যে ইলিয়াস আলী গুম হয়ে গেল, আমাদের মধ্যে চৌধুরী আলম থেকে শুরু প্রায় সতেরশ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেল, হাজার হাজার নেতাকর্মী প্রাণ দিল, প্রায় দুই হাজারের ওপরে শুধু জুলাই মাসে প্রাণ দিল—তার মূল্যটা কী? তার দামটা কী?”
শিশু একাডেমি সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে খুব কষ্ট পাই, যখন শুনি শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত শিশু একাডেমিকে এখনকার যে জায়গায় ভবন আছে, সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হবে। আমি বিবৃতি দিয়েছি, আমি আজকে এই আলোচনা সভা থেকে আবার অনুরোধ করব, আমি শুনেছি এটা নাকি হাইকোর্টে জায়গা। যারই জায়গা হোক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর সবার মতামত নিয়ে সেদিন আমাদের শিশুদের বিকশিত করবার জন্য এই শিশু একাডেমি স্থাপন করেছিলেন। এখন সারা বাংলাদেশেই শিশু একাডেমির শাখা আছে।’
২০২০ সালের ২৮ জুলাই মারা যান স্বেচ্ছাসেবক দলের তৎকালীন সভাপতি শফিউল বারী বাবু। প্রয়াত শফিউল বারী বাবুকে ‘একজন বিরল প্রতিভার অধিকারী’ নেতা হিসেবে উল্লেখ করে তাকে স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন গঠনের পরামর্শ দেন বিএনপি মহাসচিব।
প্রয়াত শফিউল বারী বাবু স্মৃতি পরিষদের সভাপতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, তাহসিনা রুশদীর লুনা (ইলিয়াস আলীর স্ত্রী), ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, এ বি এম মোশারফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, হেলেন জেরিন খান, হারুনুর রশীদ, আমীরুল ইসলামখান আলীম, এস এম জিলানি, মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর বড় ভাই সাইয়িদুল বারী মির্জা ও সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তব্য দেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রয়াত শফিউল বারী বাবুর স্ত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইনসহ ছাত্রদলের সাবেক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।