সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: মার্কিন হামলার পরও নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত রাভানচি বলেছেন, চুক্তির সীমার মধ্যে আমরা যা করছি, তা নিয়ে কারও আমাদের নির্দেশ দেওয়ার অধিকার নেই।
ইরানের ভয়ংকর হামলা
এগারোতম দিনে গড়িয়েছে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘাত। এরই মধ্যে এ সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘পরম বন্ধুকে’ পাশে পেয়ে যেন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। গত ২৪ ঘণ্টায় ইরানের বেশ কয়েকটি প্রদেশে সামরিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছে ‘মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া’ হয়ে ওঠা দেশটি।
তবে, জবাব দিচ্ছে ইরানও। গত কয়েক ঘণ্টায় ইসরায়েলের বিভিন্ন জায়গায় ৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তারা। আর এ হামলায় টালমাটাল হয়ে গেছে ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা।
সোমবার (২৩ জুন) ইসরায়েলের ওয়াইনেট সংবাদসংস্থার বরাতে এ খবর জানিয়েছে আল জাজিরা।
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইরানের নতুন ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি সরাসরি আঘাত হেনেছে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ কোম্পানির কৌশলগত স্থাপনার কাছে। এতে চরম গোলযোগ দেখা দিয়েছে ওই এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহে।
টাইমস অফ ইসরায়েলের খবর বলছে, দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক গোলযোগ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েল ইলেকট্রিক করপোরেশন জানিয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার কাজ চলছে। অবকাঠামো মেরামত ও ঝুঁকিপূর্ণ সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তাবাহিনীও সেখানে কাজ করে যাচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ইরানের হামলার সময় প্রায় ৩৫ মিনিট ধরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সাইরেন বেজেছে। সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল থার্টিনের খবর বলছে, ১৩ জুন হামলা শুরুর পর থেকে আজ সবচেয়ে লম্বা সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে হয়েছে ইসরায়েলিদের।
মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা
সিরিয়ায় একটি আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটির পশ্চিম হাসাকা প্রদেশের একটি এলাকায় অবস্থিত আমেরিকান সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়।
আজ সোমবার (২৩ জুন) ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কাসরুক অঞ্চলে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হঠাৎ করে হামলা চালানো হয়। হামলার ধরন বা এতে কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে—সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, ঘাঁটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এলাকাজুড়ে সাময়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার পর মার্কিন সেনারা পুরো ঘাঁটির চারপাশ ঘিরে ফেলে এবং ওই এলাকায় ব্যাপক নজরদারি শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এলাকাজুড়ে ড্রোন ও সামরিক হেলিকপ্টারের গতিবিধি লক্ষ্য করা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে একটি বড় বার্তা বহন করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, এই হামলাটি সেই প্রেক্ষাপটেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর অতীতে একাধিকবার রকেট ও ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইরানপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর এসব হামলার দায় দেওয়া হলেও, অনেক ক্ষেত্রেই হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে, এই হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক মহল।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের হামলা সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
উল্লেখ্য, কোনোপ্রকার উস্কানি ছাড়াই গত ১৩ জুন দিনগত রাত হঠাৎ ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামের এই অভিযানে রাজধানী তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ও আবাসিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।
ইসরায়েলের হামলার পর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে শুক্রবার রাতে ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩ নামে’ অভিযান শুরু করে ইরান। তেহরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ভেদ করে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানছে। এতে হতাহত কম হলেও ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।