বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, সিএনএন বিডি ২৪.কম: গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বিস্ফোরণে সাত সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি এই দিনটিকে ‘ইসরায়েলের জনগণের জন্য খুব কঠিন দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ইরানের হামলা ক্ষতিপূরণ চেয়েছে ৩৯ হাজার ইসরায়েলি
ইরানের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় বিপর্যস্ত ইসরায়েলিরা এখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কাছে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানিয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৯ হাজার ক্ষতিপূরণের আবেদন জমা পড়েছে।
সংবাদমাধ্যমটির খবর অনুযায়ী, গত ১৩ জুন ইরান-ইসরায়েলের সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরানি হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইসরায়েলের কর কর্তৃপক্ষ একটি ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠন করেছে। এই তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোট ৩৮ হাজার ৭০০টি আবেদন জমা পড়েছে।
আবেদনগুলোর বিস্তারিত বিবরণ অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ঘরবাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ৩০ হাজার ৮০৯টি আবেদন জমা পড়েছে। এছাড়া ৩ হাজার ৭১৩টি আবেদন জমা পড়েছে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতির কারণে। যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য জিনিস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে ৪ হাজার ৮৫টি।
ইসরায়েলি ওয়েবসাইট বেহাদ্রেই হারেদিমের তথ্যমতে, শুধু তেল আবিবেই ক্ষতিপূরণ চেয়ে ২৪ হাজার ৯৩২টির বেশি আবেদন জমা পড়েছে, যা মোট আবেদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। দক্ষিণাঞ্চলের আশকেলন শহরে আবেদন জমা পড়েছে ১০ হাজার ৭৯৩টি।
যদিও ইসরায়েল সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলিদের কী পরিমাণে ক্ষতিপূরণ দেবে, তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে বিপুল সংখ্যক এই আবেদন সরকারের ওপর একটি বড় আর্থিক বোঝা তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গবেষণাগার ধ্বংসে বড় ক্ষতির মুখে ইসরায়েল
যুদ্ধ চলাকালীন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বেয়েরশেবারের বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগার বিধ্বস্ত হয়েছে। যার ফলে হারিয়ে গেছে বছরের পর বছর ধরে করা বিভিন্ন গবেষণার তথ্য। এতে কয়েকশ কোটি টাকার বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ইসরায়েল। আজ বুধবার (২৫ জুন) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১৯ জুন চালানো এই হামলায় নিকটবর্তী সোরোকা হাসপাতালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি গবেষণা গবেষণাগার সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত এবং আরও নয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবেষণাগারগুলোতে চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে অসংখ্য তথ্য-উপাত্ত ছিল, যা বছরের পর বছর ধরে করা গবেষণার ফল। কিন্তু হামলার ফলে সব তথ্য-উপাত্ত ধ্বংস হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, হামলায় স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষণ গবেষণাগার ও ডিসেকশন রুমও উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মূল মার্কাস ফ্যামিলি ক্যাম্পাসের ৩০টি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা করছে, হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি ডলার হতে পারে, যা বাংলাদেশি টাকায় কয়েকশ কোটি টাকার বেশি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হামলায় প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীর আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ২৫ জনের বেশি মানুষকে তাদের বাসস্থান ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
এই হামলা কেবল অবকাঠামোগত ক্ষতিই করেনি, বরং ইসরায়েলের উচ্চশিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপরও ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যা দেশটির ভবিষ্যতের গবেষণা ও উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।